নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংক খাতের সংকট বেশ কিছুদিনের। তবে কিছু ব্যাংক গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে হিমশিম খাচ্ছে, আবার কয়েকটি ব্যাংকের গ্রাহকের আমানত ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভালো ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ব্যাংকগুলোতে সুদের হারও বেশি না। এরপরও গ্রাহকেরা টাকা জমা করার জন্য প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন। অনলাইনেও টাকা জমা করছেন অনেক গ্রাহক।
আমানতের সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া হয় ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে। ফলে ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদহার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। তবে ঋণের চাহিদা না থাকায় এবং ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদ কমে আসায় ভালো ব্যাংকগুলো এখন আমানতের সুদ বাড়িয়ে আগ্রাসী আচরণ করছে না। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জানুয়ারি থেকে মে মাসের আমানত স্থিতি পর্যালোচনায় এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি–মে) সবচেয়ে বেশি আমানত বেড়েছে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের। এরপর আমানত বেশি বেড়েছে ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্–বাংলা ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), পূবালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও ঢাকা ব্যাংকের।
এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ১২৪ কোটি টাকা আমানত বেড়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের। এই ব্যাংকের আমানত গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৭০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, যা মে মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। এই সময়ে ব্যাংকটির আমানতের বড় অংশ শাখা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এসেছে।
আমানত বৃদ্ধিতে দ্বিতীয়তে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। এই ব্যাংকের আমানত গত ডিসেম্বরে ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা, যা মে মাসে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ২১৭ কোটি টাকা। এই সময়ে ব্যাংকটির আমানত বেড়েছে ৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। তবে এই ব্যাংকের দেওয়া ঋণের বড় অংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। এসব ঋণ আটকা পড়েছে এস আলম গ্রুপসহ আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বিভিন্ন ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কাছে। তবে সরকার বদলের পর এই ব্যাংক দখলমুক্ত হয়েছে।
আমানত বৃদ্ধিতে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ডাচ্–বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল)। আলোচ্য পাঁচ মাসে এই ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ৫২ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা থেকে ৬ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা।
একই সময়ে ইউসিবির আমানত ৫৭ হাজার ৪১২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। তা গত ছয় মাসে ব্যাংকটির আমানত প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখেন খুচরা গ্রাহকেরা। বাড়তি আমানতের ৫৬ শতাংশই রেখেছেন খুচরা গ্রাহকেরা। অন্যদিকে করপোরেট ও এসএমই গ্রাহকদের আমানত ছিল যথাক্রমে ৩২ শতাংশ ও ১২ শতাংশ। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ আমানত কম সুদের। এই ব্যাংকও সরকার বদলের পর দখলমুক্ত হয়েছে।
পাঁচ মাসে পূবালী ব্যাংকের আমানত ৭০ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৪ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। ব্যাংকটির আমানত বেড়েছে ৩ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা।
আরও যাদের আমানত বেড়েছে: ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সিটি ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা, যা মে মাসে বেড়ে হয়েছে ৪৯ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। এই ব্যাংকের আমানত বেড়েছে ৩ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা।
জানুয়ারি-মে পাঁচ মাসে আইএফআইসি ব্যাংকের আমানত ৪৮ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। যমুনা ব্যাংকের আমানত ২৯ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩২ হাজার ৫৯ কোটি টাকা হয়েছে। ব্যাংক এশিয়ার আমানত ৩৮ হাজার ৪১৩ কোটি থেকে বেড়ে ৪০ হাজার ২০৭ কোটি টাকা ও ঢাকা ব্যাংকের আমানত ২৮ হাজার ৩২০ কোটি টাকা থেকে ২৯ হাজার ৯৯০ কোটি টাকায় উঠেছে।
একই সময়ে আমানত আরও বেড়েছে এবি ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংকের।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আর্থিক অবস্থা খারাপ হলেও কিছু ব্যাংকে সরকার বদলের পর আমানত বাড়ছে। কারণ, এসব ব্যাংকে অনিয়মের সুযোগ কমে এসেছে অথবা ব্যাংকগুলোর মালিকেরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, যা সরকারি-বেসরকারি আমানত পেতে সহায়তা করছে।
Leave a Reply