নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চতুর্থ প্রজন্মের গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ভূয়া ও অযোগ্য প্রতিষ্ঠানের নামে গ্রাহকদের আমানতের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাত করেছে বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস.আলম।
ঋণের নামে টাকা আত্মসাতের কারনে ব্যাংকটির ২০২৪ সালে প্রায় ১০ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা বা শেয়ারপ্রতি (১০৩) টাকা লোকসান হয়েছে। তবে এ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই বছরের ব্যবসায় ১ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা বা শেয়ারপ্রতি (১৩) টাকা লোকসান দেখিয়েছে।
ব্যাংকটির ২০২৪ সালের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে এস.আলম চক্র অর্থ আত্মসাতের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশীদের (এনআরবি) লক্ষ্য করে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকসহ নয়টি ব্যাংককে লাইসেন্স প্রদান করে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক রাখা হয়।
গ্লোবাল ব্যাংকের ২০২৪ সালে শেয়ারপ্রতি (১২.৬২) টাকা করে নিট লোকসান দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৩০৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আর নিট সম্পদ দেখানো হয়েছে ঋণাত্মক ২ হাজার ২৫৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি নিট (২১.৭৭) টাকা সম্পদ দেখানো হয়েছে।
তবে নিরীক্ষক জানিয়েছেন, এ ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০২৪ সালে ১১ হাজার ৩৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা প্রভিশন বা সঞ্চিতি দরকার ছিল। তবে এ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সঞ্চিতি করেছে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সঞ্চিতি ঘাটতি ৮ হাজার ৮৮১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের মাধ্যমে পরবর্তীতে গঠন করার সুযোগ পেয়েছে ব্যাংকটি।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সুযোগ আন্তর্জাতিক হিসাব মানের সঙ্গে সামঞ্জসূপূর্ণ না। কারন ব্যাংকটিকে এখন সঞ্চিতি গঠন থেকে বিরত থাকার সুযোগ দিলেও ভবিষ্যতে ঠিকই করতে হবে। সেটার প্রভাব এখন না দেখিয়ে ভবিষ্যতে দেখানো হবে। এটা এক ধরনের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা।
নিরীক্ষক জানিয়েছেন, হিসাব মান অনুযায়ি ব্যাংকটির ২০২৪ সালেই আরও ৮ হাজার ৮৮১ কোটি ১৪ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠন করা দরকার ছিল। যা করা হলে ব্যাংকটির ওই বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান (১০২.৫৭) টাকা লোকসান হতো। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদ ঋণাত্মক (১১২.২১) টাকায় নেমে আসতো।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১ হাজার ৩৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৮৪.৫৮ শতাংশ মালিকানাই রয়েছে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের হাতে। কোম্পানিটির সোমবার (১৮ আগস্ট) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ২.৮০ টাকায়।
Leave a Reply