1. baiozidkhan@gmail.com : admin_bizp :
বন্ধ হচ্ছে ব্যাংক-বহির্ভূত ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ঝুঁকিতে আরও অর্ধ ডজন - Business Protidin
শিরোনাম :
প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফের উন্নয়ন সভা অনুষ্ঠিত দেশে সরকারি ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের’ কার্যক্রম শুরু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ‘ক্ষুদ্র ঋণ ব্যাংক’ গঠনের উদ্যাগ সরকারের পঞ্চমবারের মতো সাউথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন সোনালী লাইফের বেতন কমছে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ কর্মীদের ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডি হতে লাগবে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা লাভেলো আইসক্রিমের এমডির পরিবারসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠান টিকে থাকা ও সফলতার মৌলিক ভিত্তি: আমির খসরু দারিদ্র্যসীমার নিচে যাওয়ার ঝুঁকিতে দেশের ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ: বিশ্বব্যাংক ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে কঠোর নির্দেশনা জারি

বন্ধ হচ্ছে ব্যাংক-বহির্ভূত ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ঝুঁকিতে আরও অর্ধ ডজন

  • সর্বশেষ আপডেট : রবিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: অনিয়ম, দুর্নীতি ও খেলাপির কারণে সম্প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ায় ৯টি ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে (এনবিএফআই) বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে পুরো খাতজুড়ে। কোন কোন কোম্পানি এরই মধ্যে নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে।

সম্পদ বিক্রি করেও আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করতে পিছপা হচ্ছেন না। তা সত্ত্বেও এই খাতে দুর্বল কোম্পানির সংখ্যা কম নয়। অন্তত আরও আধা ডজন কোম্পানি আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে, রয়েছে ঝুঁকিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, যে ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬০ শতাংশ থেকে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত। বিগত সরকারের সময়ে এই কোম্পানিগুলো থেকে ব্যাপক পরিমাণ লুটপাট হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না এসব প্রতিষ্ঠান। অবশেষে বাধ্য হয়েই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আমানতকারীদের স্বার্থের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের অধিকাংশ কোম্পানির অবস্থাই অতি শোচনীয়। প্রাথমিকভাবে ৯টি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি বন্ধের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘সিদ্ধান্ত হয়েছে ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে। এদেরকে টিকিয়ে রাখার কোনো পন্থা এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে নেই। কোন প্রক্রিয়ায় বন্ধ করা হবে, সেটি সরকারের ইচ্ছা এবং তহবিল সরবরাহের ওপর নির্ভর করবে। তবে ওই তহবিল আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্যই ব্যবহৃত হবে।’

দেশের আর্থিক খাতে বর্তমানে মোট ৩৫টি ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি প্রতিষ্ঠানকে সমস্যাগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকাই খেলাপি ঋণ। সার্বিকভাবে কোম্পানিগুলোর খেলাপি ঋণের হার ৮৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। বিপরীতে এসব ঋণের বন্ধকি সম্পদের মূল্য মাত্র ৬ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের মাত্র ২৬ শতাংশ।

বন্ধের ঘোষণায় কমছে দর, বাড়ছে লেনদেন
বাংলাদেশ ব্যাংক যে ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ৮টি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। প্রত্যেকটি কোম্পানিতেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতে শেষ কয়েকদিনে কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রিতে প্রচুর পরিমাণ উল্লম্ফন দেখা গেছে।

এই খবরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিজ ফাইন্যান্সের শেয়ারদর ৫ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছে। গত বুধবার শেয়ারটি এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে, সংখ্যায় যা ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৬৫৪টি। ফারইস্ট ফাইন্যান্সের শেয়ারদর ২ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ২ টাকায় নেমেছে। বুধবার লেনদেন হয়েছে ৩১ লাখ ৭৭ হাজার ৪৯৫টি শেয়ার, যা ৩ মাসের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এফএএস ফাইন্যান্স ২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৬০ পয়সায় নেমেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ শেয়ারটির লেনদেনও বেড়েছে।

জিএসপি ফাইন্যান্সের শেয়ারদর ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ৪ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৩০ পয়সায় নেমেছে। গত মঙ্গলবার কোম্পানির শেয়ার ২ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে, যা সংখ্যায় ২১ লাখ ১৫ হাজার ৮৮টি।

এছাড়া ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের শেয়ারদর ২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছে। বুধবার কোম্পানির শেয়ার ৩ মাসের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে, যা সংখ্যায় ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০টি। ছয় দিনে প্রিমিয়ার লিজিংয়ের শেয়ারদর ২ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছে। চার মাসের বেশি সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ার গত বুধবার সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৪টি।

ঘোষণা-পরবর্তী সময়ে প্রাইম ফাইন্যান্সের শেয়ারদর ৪ টাকা থেকে ২ টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছে। দেড় বছরের বেশি সময়ের মধ্যে গত বুধবার কোম্পানির সর্বোচ্চ শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা সংখ্যায় ৩২ লাখ ২২ হাজার ১০৮টি। আর পিপলস লিজিংয়ের শেয়ারদর ঘোষণা-পরবর্তী সময়ে ১ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৫০ পয়সায় নেমেছে। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানির শেয়ার দেড় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ২৬ লাখ ৬ হাজার ৪৮৬টি।

পুঁজিবাজারের বিশ্লেষকরা বলছেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানি বন্ধ করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্তে আসতে হবে। কেননা এখানে শুধু আমানতকারী নয়, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থও জড়িত। তাই তালিকাভুক্ত কোম্পানি বন্ধ করতে হলে বিনিয়োগকারীদের জন্যও নিরাপদ এক্সিট প্ল্যান রাখতে হবে।

ঝুঁকিতে আরও যেসব প্রতিষ্ঠান: বন্ধের তালিকায় না থাকা পুঁজিবাজারের অন্তত ৭টি কোম্পানি আর্থিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই নাম আসে ফনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের। শুধুমাত্র ২০২১ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এই কোম্পানির পুঞ্জিভূত লোকসান হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। কোম্পানির রিজার্ভ ঘাটতির পরিমাণও দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। এছাড়া বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৮০ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে। আমানতকারীদের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ ফেরত দিতেও ব্যর্থ হচ্ছে।

আর্থিক ঝুঁকিতে রয়েছে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেডও। ২০১৯ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির পুঞ্জিভূত লোকসান হয়েছে প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা। আর কোম্পানির রিজার্ভ ঘাটতি রয়েছে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। বিতরণকৃত ঋণের মধ্যেও ৫০ শতাংশের বেশি খেলাপি হয়ে পড়েছে। সার্বিকভাবে কোম্পানির সমুদয় দায় ও সম্পদের হিসেব করলে প্রকৃত সম্পদমূল্যও (এনএভি) ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ১১০০ কোটি টাকা।

এছাড়া ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণ ও অগ্রিমের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে। ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত কোম্পানির পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। কোম্পানির রিজার্ভ ঘাটতির পরিমাণও ৫০০ কোটির কাছাকাছি।

ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পিএলসির অবস্থাও শোচনীয়। এই কোম্পানিটির গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণ ও অগ্রিমের মধ্যে প্রায় ৫৯ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে। আর খেলাপি ঋণের মধ্যে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার বেশি বা প্রায় ৮২ শতাংশ ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণও ২০০ কোটির বেশি।

বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের খেলাপি ঋণের তথ্য জানা যায়নি। তবে কোম্পানিটি ২০২১ সাল থেকে ধারাবাহিক লোকসানের বৃত্তে রয়েছে। ওই বছর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত কোম্পানির পুঞ্জিভূত লোকসান হয়েছে সাড়ে ৬০০ কোটির বেশি। এর মধ্যে ২০২৪ হিসাব বছরেই লোকসান হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা। আর ওই বছরের ডিসেম্বর শেষে কোম্পানির রিজার্ভ তহবিলে ঘাটতি পড়েছে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা।

এদিকে ২০২৩ সাল থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মাইডাস ফাইন্যান্স পিএলসির পুঞ্জিভূত লোকসান হয়েছে ১২০ কোটির বেশি। যদিও কোম্পানির রিজার্ভ এখনো ঋণাত্মক হয়নি। তবে কোম্পানির খেলাপির পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণ ও অগ্রিমের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ খেলাপি হয়েছে। পাশাপাশি আমানত কমে যাওয়া, বিনিয়োগ হ্রাসসহ বিভিন্ন কারণে কোম্পানির ব্যবসায়িক পরিধি ছোট হচ্ছে। এতে ধারাবাহিক লোকসানে ডুবে যাচ্ছে কোম্পানিটি।

এর বাইরে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স পিএলসিও আর্থিকভাবে অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে চলে এসেছে। কোম্পানিটি ২০২৩ ও ২০২৪ হিসাব বছরে বড় ধরনের লোকসান করেছে। যদিও চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) সামান্য মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে। তবে কোম্পানির রিজার্ভে সাড়ে ৭০০ কোটির বেশি ঘাটতি পড়েছে। এই কোম্পানিটির খেলাপি ঋণের সর্বশেষ অবস্থা জানা যায়নি।

পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ও বিশ্লেষক অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, ‘প্রভাবশালীদের যোগসাজশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দিয়েছে নামমাত্র কোম্পানিকে, বিনিয়োগ করেছে প্রি-আইপিও শেয়ারে, যা বাজারে আসেনি। শীর্ষ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরাও লুটপাট করেছে, ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ধ্বংসের মুখে।’

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের সোশ্যাল মিডিয়া আইকনে ক্লিক করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2025 Businessprotidin.com
Site Customized By NewsTech.Com