নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে সংস্কারের কথা হয়েছে। বলা হচ্ছে বিদেশ থেকে এক্সপার্ট এনে সংস্কার করা হবে। আমার প্রশ্ন দেশে কি কোনো এক্সপার্ট নেই?
শনিবার (২৪ মে) ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনায় পুঁজিবাজার: দর্শন ও বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনায় মূল প্রবন্ধে তিনও এসব কথা বলেন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশের পুঁজিবাজার থেকে ২০১০-১১ সালে ২০ হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শাস্তি যদি না হয় অন্যায় ও দুর্নীতি রোধ করা যায় না। আমরা দেখেছি ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পুঁজিবাজারে অনিয়ম হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে পথে বসিয়ে দেওয়া হয়। সে সময় বাজার থেকে বিপুল অর্থ বের করে নেওয়া হয়। তার কোনো বিচার হয়নি।
তিনি আরও বলেন, বিচার না হওয়ার কারণে আমরা ২০১০ সালে আবারও একই ধরনের চিত্র দেখেছি। রাজনৈতিকভাবে সিন্ডিকেট করে পুঁজিবাজার থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এই ঘটনারও কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, পুঁজিবাজারে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যারা অনিয়ম করেছেন তাদের কেউ কেউ জেলে আছেন। তবে তারা জেলে আছেন অন্য ঘটনায়। পুঁজিবাজারের অনিয়মের কারণে এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার থেকে চালাক। সুতরাং আপনি যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থায় আরও বেশি চালাক ব্যক্তিকে দায়িত্ব না দেন, তাহলে ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন না।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, পুঁজিবাজার দিন আনি দিন খাইয়ের জায়গা না। এটা দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আশানুরূপ বিনিয়োগ, সঞ্চয় ও কর্মসংস্থান করতে পারছে না। এছাড়া এই বাজার যাদের দ্বারা পরিচালিত হয়, সেই বিনিয়োগকারী, রেগুলেটর, লিস্টেড কোম্পানি ঠিকমতো চলছে না।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে এই মুহূর্তে যে সমস্যা আছে এটা বৃহত্তর কাঠামোতে যদি আলোচনা না করি, তাহলে হবে না। আপনি যদি আলোচনা ছাড়া ঠিক সিদ্ধান্ত নেন, সেটাও ঠিক হবে না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন বিএসইসি কমিশনার মো. মোহসিন চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য মো. মোবারক হোসাইন, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক ড. তাজনুভা জাবিন, আইসিএমএবির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
Leave a Reply