নিজস্ব প্রতিবেদক: তারল্যসংকট, টানা দরপতন ও বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতায় দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল দেশের পুঁজিবাজার। এমন প্রেক্ষাপটে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে নেওয়া হয়েছে কয়েকটি সাহসী ও সময়োপযোগী উদ্যোগ। যার ফলে উপকৃত হবেন দেশের প্রায় ১৭ লাখ বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টধারী বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা।
প্রস্তাবিত বাজেটে তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট কর ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনে উৎসে কর দশমিক শূন্য ২ শতাংশ কমানো হচ্ছে। পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি আইপিওতে শেয়ার হস্তান্তর করা কোম্পানির করপোরেট কর ২২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে। একই সঙ্গে ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়ানো হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পুঁজিবাজারে লাগাতার দরপতন চলছে। এতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা কমে গেছে। দৈনিক লেনদেন নেমে এসেছে মাত্র ৩০০ কোটির ঘরে। এ অবস্থায় বাজেটে প্রস্তাবিত পাঁচটি উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরবে এবং তারল্য সংকট কিছুটা কাটবে বলে মনে করছেন তারা। এতে করে ১৭ লাখ বিও অ্যাকাউন্টধারী বিনিয়োগকারী, ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক এক্সচেঞ্জের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে, ফলে তারা নতুন করে বাজারে লেনদেন ও বিনিয়োগে সক্ষম হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আল-আমিন বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজারের সব স্টেকহোল্ডারের দাবির প্রতিফলন ঘটেছে। এর ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্ষমতা বাড়বে, যা বাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
সূত্র জানিয়েছে, বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনঃস্থাপনে সরকারের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করবেন। দেশি-বিদেশি লাভজনক কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত করতে উৎসাহ দিতে লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির কর ব্যবধান বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির কর ব্যবধান বাড়ানোর ফলে ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে উৎসাহিত হবে। তবে এটি আরও বাড়িয়ে ১০-১৫ শতাংশ করলে ফল আরও ভালো হতো।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, উৎসে কর কমানোর দাবি আমরা এক যুগ ধরে করে আসছি। আগে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে প্রায় ৬০ শতাংশ কর দিতে হতো। প্রস্তাবিত হার বাস্তবায়িত হলে এটি ২৭-৩০ শতাংশে নেমে আসবে, ফলে হাউসগুলো ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মাজেদা খাতুন বলেন, কর হ্রাসের ফলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আয় ও আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে। এতে তারা ভালো কোম্পানিগুলোকে আইপিওর মাধ্যমে বাজারে আনার উদ্যোগ নিতে পারবে, যা বাজারের জন্য ইতিবাচক।
Leave a Reply