নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যবসায়িকভাবে বড় ধাক্কায় পড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের কোম্পানি বেস্ট হোল্ডিংস পিএলসি। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৭৫ শতাংশ। এছাড়াও টার্নওভার কমেছে ৩৫ শতাংশ এবং শেয়ার দর কমেছে প্রায় ৪৭ শতাংশ।
জানা যায়, ২০২৪ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ৩০৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে বেস্ট হোল্ডিংস। ওই সময় প্রসপেক্টাসে ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি, উচ্চ মুনাফা এবং সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের ছবি তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই কোম্পানির আর্থিক অবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানির নিট মুনাফা ছিল ১০৫ কোটি টাকা, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে এসে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৬ কোটি ৪২ লাখ টাকায়। মুনাফা কমেছে ৭৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বা ৭৫ শতাংশ। এ সময় শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ১.০৯ টাকা থেকে নেমে হয়েছে ০.২৫ টাকা, অর্থাৎ ৭৭ শতাংশ কমেছে।
শুধু মুনাফাই নয়, কোম্পানির টার্নওভারও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে যেখানে টার্নওভার ছিল ২৬৭ কোটি টাকা, এবার তা নেমে এসেছে ১৭৪ কোটিতে। কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। একই সময়ে কোম্পানিটির গ্রাহকদের কাছ থেকে নগদ গ্রহণ (ক্যাশ রিসিভড ফ্রম কাস্টমারস অ্যান্ড আদার্স) কমেছে প্রায় ৮৭ কোটি টাকা বা ৩০ শতাংশ। এতে বোঝা যায়, বাজারে কোম্পানিটির কার্যক্রম ও গ্রহণযোগ্যতা দুটোই হ্রাস পেয়েছে।
অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও কোম্পানিটির ঋণ এবং সুদ ব্যয় (ফিন্যান্সিয়াল এক্সপেনসেস) আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে সুদ ব্যয় ছিল ৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা চলতি বছরে দাঁড়িয়েছে ৩৩ কোটি ২৭ লাখ টাকায় বৃদ্ধির হার প্রায় ৮৮০ শতাংশ।
সাধারণ বিনিয়োগকারী রাজু আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, বেস্ট হোল্ডিংস তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে ইচ্ছাকৃতভাবে ইপিএস কম দেখাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কিছু দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কোম্পানিটি ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের নামে-বেনামে প্লেসমেন্ট শেয়ার দিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হয়েছেন।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, বেস্ট হোল্ডিংসের ক্ষেত্রে আইপিওতে অতিরিক্ত ইপিএস, টার্নওভার ও এনএভি দেখিয়ে বাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। বাস্তবতা এখন ভিন্ন। তারা বলেন, এরকম কোম্পানি তালিকাভুক্ত করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও সমালোচনার মুখে পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বেস্ট হোল্ডিংস পিএলসির কোম্পানি সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক থেকেই দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে আমাদের হোটেল ব্যবসায়। লা মেরিডিয়ান হোটেলে বিদেশি অতিথির সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছিল। এখনো সেই প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। আশা করছি, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী আসবেন। তখন আমাদের ব্যবসা ভালো হবে।
এদিকে রোববার (২৭ জুলাই) বেস্ট হোল্ডিংসের সমাপনী শেয়ার দর ছিল ১৬ টাকা ৪০ পয়সা। ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট শেয়ারটির দাম ছিল ৩০ টাকা ৭০ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরে দাম কমেছে ১৪ টাকা ৩০ পয়সা বা ৪৬ দশমিক ৬০ শতাংশ।
কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১০৫ কোটি ৯২ লাখ, যার মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ১৪.৪০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ২০.২৬ শতাংশ এবং উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৬৫.৩৪ শতাংশ শেয়ার।
Leave a Reply