নিজস্ব প্রতিবেদক: হাসিনা সরকার পতনের পর বেসরকারি খাতের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র পরিচালকদের নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ছয় মাসের মধ্যেই তারা জড়িয়ে পড়েছেন নানা রকম অনিয়মে। পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান, জনবল নিয়োগ, বদলি ও পদায়নসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয় কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংক পরিদর্শন শুরু করেছে। গত ছয় মাসে নিয়োগ, বিনিয়োগ, আদায়, ঋণ পুনঃতফসিলের তথ্য চেয়েছে ব্যাংকগুলোর কাছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বতন্ত্র পরিচালকরাও যদি শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের মতো অনিয়ম করেন তাহলে সরকারের আর্থিক খাত সংস্কারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। আমানতকারীদের মধ্যে আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষী পরিচালকদের অপসারণ ও শাস্তির আওতায় আনা।
৮ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর কয়েকটি শরিয়াহ ব্যাংকসহ ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে স্বতন্ত্র পরিচালকদের নিয়োগ দিয়ে পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। দায়িত্ব পাওয়ার পর কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালক ঋণ বিতরণ ও পছন্দের জনবল নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছেন।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর কোনো কর্মকর্তা মুখ খোলার সাহস পাচ্ছিলেন না। তবে ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল জলিলকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছেন অন্য ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বেসরকারি খাতের আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা গভর্নরের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীরকে অপসারণ দাবি করে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি পর্ষদ সভায় পরিচালকদের সঙ্গে বাগ্মিতা করে নিয়মিত অফিস করেন। ব্যাংকের অডিট বিভাগের প্রধান হুমায়ুন কবীরের সাবেক সহকর্মী। এই পরিচয় ব্যবহার করে তিনি অডিট রিপোর্টে হস্তক্ষেপ করছেন।
একইভাবে পছন্দের ২১ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান খাজা শাহরিয়ার ও পরিচালক মো. আবদুল ওয়াদুদ। তারা দুজন মিলে প্রায় অর্ধশত কর্মী নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে প্রথম দফায় ২১ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। যোগদান করেছেন ১৩ জন। এদের মধ্যে ৬টি ইনক্রিমেন্টসহ একজন ইভিপি, ১২টি ইনক্রিমেন্টসহ একজন এসভিপি, ১৩টি ইনক্রিমেন্টসহ তিনজন এসভিপি, ৯টি ইনক্রিমেন্টসহ দুজন ভিপি, আটটি ইনক্রিমেন্টসহ একজন ভিপি, দুজন এভিপি ও তিনজন এসএভিপি নিয়োগ দিয়েছেন। এতে ব্যাংকটির খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
এ ছাড়াও সুহি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রিতি কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড, অক্সফোর্ড কালারস লিমিটেড ও প্রিতি ওয়াশিং লিমিটেডের ৮৭৫ কোটি টাকার ঋণ ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭ শতাংশ সুদে পুনঃতফসিল করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকা আয় কম হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট থেকে পর্ষদ পুনর্গঠন করা ব্যাংকগুলোর কাছে তথ্য চেয়েছে। বিগত ছয় মাসে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভার কার্যবিবরণী, জনবল নিয়োগের তালিকা, বিনিয়োগ আদায়ের পরিমাণ ও তালিকা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়াও ব্যাংকের মোট যানবাহনের সংখ্যা ও ব্যবহারকারীর তালিকা চাওয়া হয়েছে। সম্প্রতি আল-আরাফাহ ব্যাংক পরিদর্শন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দল।
Leave a Reply