নিজস্ব প্রতিবেদক: শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পুঁজিবাজারে বড় উল্লম্ফন দেখা যায় প্রথম দুই সপ্তাহে। অবশ্য শেষ দুই সপ্তাহ বিনিয়োগকারীদের জন্য খুব একটা ভালো যায়নি। তবে প্রথম দুই সপ্তাহে ভর করে সরকার পতন পরবর্তী একমাসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির বাজার মূলধন বেড়েছে পৌনে ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোম্পানিরই বেড়েছে অর্ধেকের বেশি। ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গত এক মাসের বাজার মূলধন বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। একই দিনে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান। হাসিনা সরকারের পতনের পর আগস্টের ৮ তারিখ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। যদিও নতুন এ সরকারের অধীনে পুঁজিবাজারে লেনদেনের সময়কাল এখনো একমাস পূর্ণ হয়নি। কেননা নতুন এ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর পুঁজিবাজারে প্রথম লেনদেন হয় ১১ আগস্ট। তবে শেখ হাসিনা সরকার পতন পরবর্তী পুঁজিবাজারে লেনদেনের একমাস পূর্ণ হয়েছে গত ৫ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার)।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক মাসে জেগে উঠেছে পুঁজিবাজার। গত ৫ সেপ্টেম্বর পূর্ববর্তী একমাসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে পাঁচশ পয়েন্ট। বেড়েছে এক্সচেঞ্জটির গড় লেনদেনও। ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী মাসে ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল চারশ কোটি টাকার ঘরে। কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তী মাসে দৈনিক গড় লেনদেন বেড়ে সাতশ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে।
আলোচিত সময়ে ডিএসইতে বাজার মূলধন ৪৭ হাজার কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৬ লাখ ৯২ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে শীর্ষ ৫ কোম্পানির বাজার মূলধনের অবদান ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ বা ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা।
ডিএসইতে বাজার মূলধন বিবেচনায় গত ৫ সেপ্টেম্বর শেষে শীর্ষে অবস্থান করছে টেলিকম খাতের কোম্পানি গ্রামীণফোন লিমিটেড। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে যথাক্রমে- ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি) লিমিটেড এবং ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। এছাড়া বর্তমানে শীর্ষ বাজার মূলধন তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে- স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি এবং রবি আজিয়াটা লিমিটেড।
শীর্ষ এই পাঁচ কোম্পানির যৌথ বাজার মূলধন গত ৫ সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকার পতন পরবর্তী একমাসে শীর্ষ ৫ কোম্পানির বাজার মূলধন বেড়েছে ২১ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। মাসের ব্যবধানে শতকরা হিসেবে এ পাঁচ কোম্পানির বাজার মূলধন বেড়েছে ২১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
গ্রামীণফোন: ৪৫ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা বাজার মূলধন নিয়ে ডিএসইতে শীর্ষে অবস্থান করছে টেলিকম খাতের এ কোম্পানিটি। এক্সচেঞ্জটির মোট বাজার মূলধনে কোম্পানির অবদান ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গত ৪ আগস্ট (অথাৎ সরকার পতনের আগে) শেষে কোম্পানি বাজার মূলধন ছিল ৩৪ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে সরকার পতন পরবর্তী একমাসে গ্রামীণফোনের বাজার মূলধন বেড়েছে ১১ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা বা ৩২ দশমিক ৮১ শতাংশ।
বিএটিবিসি: ডিএসইর মোট বাজার মূলধনের ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ দখলে নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো। কোম্পানিটির বর্তমান বাজার মূলধন ২২ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। গত ৪ আগস্ট শেষে যা ছিল ১৭ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। অথাৎ সরকার পতন পরবর্তী একমাসে কোম্পানিটির বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা বা ২৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
ওয়ালটন: গত ৫ সেপ্টেম্বর শেষে প্রকৌশল খাতের এ কোম্পানিটির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। ডিএসইর মোট বাজার মূলধনে কোম্পানিটির অবদান ৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। একমাস আগে অথাৎ ৪ আগস্ট কোম্পানির বাজার মূলধন ছিল ১৮ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে সরকার পতন পরবর্তী একমাসে ওয়ালটনের বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ১১৫ কোটি বা ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
স্কয়ার ফার্মা: ডিএসইর মোট বাজার মূলধনে ৫ দশমি শূন্য ৭ শতাংশ অবদান নিয়ে তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ওষুধ খাতের এ কোম্পানিটি। বর্তমানে এর বাজার মূলধন রয়েছে ২০ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। একমাস আগে যা ছিল ১৮ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকার পতনের পর স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে যা বেড়েছ ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ।
রবি: ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ অবদানের ভিত্তিতে ডিএসইর বাজার মূলধন তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে উঠে এসেছে টেলিযোগাযোগ খাতের এ বহুজাতিক কোম্পানিটি। গত ৫ সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। একমাস আগে যা ছিল ১২ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। অথাৎ সরকার পতনের পর রবি আজিয়াটার বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা বা ২০ দশমিক ৬১ শতাংশ।
Leave a Reply