নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের ব্যাংক খাতের বিদ্যমান ঋণ দেওয়ার পদ্ধতির বদল করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে ঋণের জন্য মূলত পুঁজিবাজারকে বেছে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান।
রোববার (৭ জুলাই) সমাজ গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রেহমান সোবহান বলেন, এখানে আছে অদক্ষতা, আছে অবিচারও। এখানে স্বল্প সময়ের জন্য আমানত নিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। একশ্রেণির গ্রাহক আবার ঋণের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। অর্থাৎ পদ্ধতিতেই গলদ রয়েছে। এজন্য ব্যাংক খাতের বিদ্যমান ঋণ দেওয়ার পদ্ধতির বদল করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে ঋণের জন্য মূলত পুঁজিবাজারকে বেছে নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, বাংলাদেশে সরকারি তথ্য অনুযায়ী খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্য অনুযায়ী, তা ৪ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি হবে। আর প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি।
প্রবন্ধে এম এম আকাশ বলেন, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অথচ খেলাপি ঋণের হার ভারতে ৯ দশমিক ২, ইন্দোনেশিয়ায় ২ দশমিক ৯, শ্রীলঙ্কায় ২ দশমিক ৬, নেপালে ২, ফিলিপাইনে ১ দশমিক ৯ এবং মালয়েশিয়ায় ১ দশমিক ৬ শতাংশ।
প্রবন্ধে আরও জানানো হয়, ঋণ অবলোপন শুরু হয় ২০০২ সালে। আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছরেই (২০০৯-১৯) এ ঋণ অবলোপন বেড়েছে ৩১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০০৯ সালে ঋণ অবলোপন ছিল ১৫ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। এ অবলোপন ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাড়তে বাড়তে ৪৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়।
জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ কীভাবে বাড়ছে, তার একটি চিত্রও তুলে ধরেন এম এম আকাশ। এক উপস্থাপনায় তিনি দেখান, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে ব্যবসায়ী ছিলেন ১৮ শতাংশ। এরপর ১৯৭৩ সালের সংসদে ২৪ শতাংশ, ১৯৯০ সালের সংসদে ৩৮ শতাংশ, ১৯৯৬ সালের সংসদে ৪৩ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী। ২০০১ সালে এ হার ৫৮ শতাংশে পৌঁছায়। ২০০৮ সালে তা ১ শতাংশ কমে ৫৭ শতাংশ হলেও ২০১৪ সালে দাঁড়ায় ৫৯ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ৬১ শতাংশে।
এম এম আকাশ বলেন, এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা বের হয়ে গেছে। এসব ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরে টাকা দিয়েছে, তা–ও বের হয়ে গেছে।
ব্যক্তি খাতের ব্যাংকগুলোতেও খেলাপি ঋণের সমস্যা, ৬ ও ৯ শতাংশ সুদহার নীতির উদ্ভবের কারণ ও অভিজ্ঞতা, ব্যাংক একত্রীকরণ নীতির উদ্ভবের কারণ ও অভিজ্ঞতা, বাজেট–ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের বিপুল পরিমাণ ঋণ নেওয়ার প্রতিফলন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়।
Leave a Reply