নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বীমা খাতে ‘বীমা দাবি’র পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। ২০২৪ সালে দেশের জীবন বীমা খাতে মোট ১২ হাজার ৯৬৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকার বীমা দাবি জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি কোম্পানি মিলে পরিশোধ করেছে ৮ হাজার ৫৯০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। বছর শেষে অনিষ্পন্ন বীমা দাবির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৭৫ কোটি ৬ লাখ টাকা।
৩৫টি জীবন বীমা কোম্পানির অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালে মোট দাবির ৭২ শতাংশ পরিশোধ করা হলেও, ২০২৪ সালে এই হার সামান্য বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। যদিও ২০২২ সালে এ হার ছিল ৬৭ শতাংশ। অর্থাৎ দাবির অঙ্ক বাড়লেও নিষ্পত্তির হার খুব একটা বাড়েনি।
বীমা বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে জীবন বীমার ব্যবসা বাড়লেও দাবি নিষ্পত্তির পরিমাণ খুব একটা না বাড়ায় কোম্পানিগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও সক্ষমতার ওপর চাপ বাড়ছে।
আইডিআরএ জানিয়েছে, দাবি পরিশোধের হিসাবে ২০২৪ সালে মেটলাইফ বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এককভাবে পরিশোধ করেছে ২ হাজার ৮৯৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
এরপর রয়েছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটির দাবি পরিশোধ করেছে ৮৮৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে জীবন বীমা কর্পোরেশন। প্রতিষ্ঠানটি পরিশোধ করেছে ৫৭২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
এছাড়া গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স (৪৩৮.৭৯ কোটি), প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স (৩৮৭.১২ কোটি), পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স (৩৮৯.২০ কোটি) এবং সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স (৩৭৯.৭৭ কোটি) উল্লেখযোগ্য পরিমাণ দাবি পরিশোধ করেছে।
৩৫ কোম্পানির মধ্যে আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (এলআইসি) শতভাগ দাবি নিষ্পত্তি করেছে।
২০২৩ সালে অনুমোদনপ্রাপ্ত শান্তা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোনো বীমা দাবি জমা পড়েনি। আর ১৯৯৯ সালে অনুমোদনপ্রাপ্ত গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০২৪ সালের জন্য কোনো আর্থিক প্রতিবেদন আইডিআরএ-তে দাখিল করেনি।
আইডিআরএ বলছে, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর আর্থিক বিবরণী জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে কয়েকটি কোম্পানির ক্ষেত্রে এই অনিয়ম দেখা যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ ও বীমা বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবন বীমা খাতে ক্রমবর্ধমান বীমা দাবি প্রমাণ করে এই খাতের বিস্তার ঘটছে। তবে অনিষ্পন্ন দাবির অঙ্কও বাড়ছে, যা খাতের আর্থিক শৃঙ্খলার জন্য উদ্বেগজনক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যত দ্রুত দাবি নিষ্পত্তি হয়, গ্রাহকের আস্থা তত বাড়ে। তাই অনিষ্পন্ন দাবির অঙ্ক কমাতে কোম্পানিগুলোকে আরও কার্যকর ব্যবস্থাপনা এবং পর্যাপ্ত তহবিল সংরক্ষণ করতে হবে।
Leave a Reply