নিজস্ব প্রতিবেদক: অফিস শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং নাশকতার অভিযোগে ২১ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে আইনি ও প্রশাসনিক সংকটে পড়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের অন্তত সাতজন হাইকোর্টের ২০১৫ সালের একটি আদেশের ব্যাখ্যা দেখিয়ে নিজ উদ্যোগে অফিসে যোগ দিয়েছেন। গত ২ জুলাই থেকে অফিসে ফিরলেও এখনও তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন।
এদিকে সরকারের উপসচিব পদের কর্মকর্তা মনির হোসেন হাওলাদারকে প্রেষণে বিএসইসির পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তাঁকে প্রথমে তাঁর সমমর্যাদার বিএসইসির যুগ্ম পরিচালক পদেই নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুরোধে দুই ধাপ উপরের পদ পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আইনগত দিক খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।
এদিকে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে অসৌজন্যমূলক আচরণ করার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ এপ্রিল অফিস শৃঙ্খলাভঙ্গ ও নাশকতার অভিযোগে ২১ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিএসইসি। একই সঙ্গে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এর পর প্রায় তিন মাস কেটে গেলেও চূড়ান্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংস্থাটি।
তবে এর মধ্যে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পরিচালক আবু রায়হান মোহাম্মদ মুতাসীম বিল্লাহ হাইকোর্টের ২০১৫ সালের একটি রায় দেখিয়ে ২ জুলাই অফিসে যোগ দিয়েছেন। ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান এবং বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চের এক রিট (রিট নম্বর- ৩৬৫৭/২০১৫) আদেশে বলা হয়, ‘যদি বিদ্যমান আইনে ভিন্নভাবে না বলা থাকে, তাহলে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের বেশি কোনো সরকারি বা সরকারি অনুরূপ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত রাখা যাবে না এবং তাহলে তাঁকে সম্পূর্ণ বেতন দিতে হবে।’
জানতে চাইলে আবু রায়হান মোহাম্মদ মুতাসীম বিল্লাহ বলেন, ‘কমিশনের চাকরিবিধিতে অনির্দিষ্টকাল সাময়িক বরখাস্ত রাখার বিধান নেই। ফলে অফিসে যোগ দিয়ে কমিশনকে জানিয়েছেন।
মুতাসীম বিল্লাহ স্বউদ্যোগে যোগদানের পর সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম, পরিচালক আবুল হোসেন, ফখরুল ইসলাম মজুমদার, উপপরিচালক মো. নানু ভূঞা, সহকারী পরিচালক আমিনুল হক খানসহ আরও কয়েকজন অফিসে হাজিরা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে কমিশন এখন পর্যন্ত তাদের কাউকে দায়িত্ব দেয়নি বা প্রশাসনিক চিঠিপত্রের মাধ্যমে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, সাময়িক বরখাস্ত হলেও অফিসে হাজিরা দিতে হয়। তবে হাইকোর্টের রায় দেখিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেননি তিনি।
বিএসইসির কমিশনার মোহসীন চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আইনি মতামত নিতে আইন বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আইন বিভাগ জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবীর কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। তবে আইনি মতামত এসেছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ।
এদিকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়াদের ফাঁকা পদে নিয়োগের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে উপসচিব মনির হোসেন হাওলাদারকে বিএসইসিতে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয় পরিচালক পদে, যা তাঁর নিজস্ব পদমর্যাদার তুলনায় দুই ধাপ ওপরে।
বিএসইসির চাকরিবিধি অনুযায়ী পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা না থাকলে পরিচালক পদে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া যাবে। উপসচিব পদে কর্মকর্তা চতুর্থ গ্রেডে বেতন-ভাতা পেলে অতিরিক্ত পরিচালক এবং পঞ্চম গ্রেডের হলে যুগ্ম পরিচালক পদে নিয়োগ পেতে পারেন। উপসচিব পদমর্যাদার মনির হোসেন পঞ্চম গ্রেডে বেতন-ভাতা পান।
মনির হোসেন বলেন, কমিশনে উচ্চতর পদে নিয়োগ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ই দিয়েছে। তবে সরকারের নির্ধারিত গ্রেডেই আর্থিক সুবিধা পাবেন; এ ক্ষেত্রে কোনো বৃদ্ধি হয়নি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মনির হোসেনকে শুরুতে যুগ্ম পরিচালক পদে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশে তাঁর পদায়ন পরিবর্তন করে পরিচালক করা হয়।
Leave a Reply