নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হবে আগামী ২ জুন। এই বাজেট ঘোষণা নিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এ নিয়ে ১৯ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করছে এনবিআর।
জানা যাচ্ছে, জাতীয় সঞ্চয়পত্র কিনতে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা উঠে যাচ্ছে এবার। ১৯ মে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা, এনবিআর চেয়ারম্যান, অর্থ সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে এক বছর ধরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। সঞ্চয়পত্র ভেঙে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট বা প্রকৃত ঋণ ঋণাত্মক হয়ে গেছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সাড়ে ৮৩ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য সরকারের। এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৩৬ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে প্রথম সাত মাসে ৪৩ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙা হয়েছে।
বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে আগের বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র জমা দিতে হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সীমিত ও মধ্যম আয়ের মানুষরা। এবার পাঁচ লাখ বা তার বেশি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নিতে পারে সরকার। নতুন বাজেটে এ সুযোগ রাখা হতে পারে। এর ফলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আরও সহজ হবে।
এনবিআর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের জটিলতা বা ভোগান্তি কমাতে এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।
এনবিআরের আয়কর বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাজেটে সঞ্চয়পত্র কেনায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র (পিএসআর) দেখানোর বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হতে পারে। অথবা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সঞ্চয়পত্র কেনার সীমা পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়া হতে পারে। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেককেই করযোগ্য আয় না থাকা সত্ত্বেও শুধু সঞ্চয়পত্র কেনার কারণে প্রতিবছর রিটার্ন জমা দিতে হয়। এতে অনেকেই ভোগান্তির সম্মুখীন হন। এবার এটা সহজ করা হবে।
এছাড়া ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা বা তার বেশি মেয়াদি আমানত খুলতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও উঠিয়ে নিতে পারে সরকার। আর চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, হিসাববিদ, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ারসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ পেতে এবং তা বহাল রাখতেও এ ধরনের বিধান থাকছে না। তবে এসব সেবায় টিআইএন থাকতে হবে। সব মিলিয়ে ১০ সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র উঠিয়ে নিতে পারে সরকার। বর্তমানে দেশে ৪৫টি সরকারি-বেসরকারি সেবা পেতে গেলে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র বা পিএসআর দেখাতে হয়।
বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। এগুলো হলো, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্র। এর মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্রের চাহিদা সবচেয়ে বেশি আর শুধু নারীরাই এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।
Leave a Reply