নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হবে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে উন্নত করার জন্য সু-শাসনের কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন ঢাকা স্টক একচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু।
বুধবার(১০ জুলাই)নেদারল্যান্ড ভিত্তিক গ্লোবাল রিপোর্টিং ইনিশিয়েটিভ (জিআরআই) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ যৌথ উদ্যোগে তালিকাভুক্ত ৭৫টি কোম্পানির প্রতিনিধিবৃন্দের অংশগ্রহণে ডিএসই’র ট্রেনিং একাডেমি-তে জিআরআই স্ট্যান্ডার্ড-২০২১ এর উপর টেকসই প্রতিবেদনের জন্য গাইডেন্স ডকুমেন্টের উদ্বোধন শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন৷
হাফিস হাসান বাবু বলেন, জিআরআই প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে। জিআরআই আমাদের রিপোর্টের মান বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে। আমি আশা করি জিআরআই এর সহযোগিতা উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। গ্লোবাল রিপোর্টিং ইনিশিয়েটিভ(জিআরআই) এর গাইডলাইনগুলো বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য, প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত, বিশ্বস্ত এবং ব্যবহার বান্ধব৷ কোম্পানির প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা হলো সততা ও বিশ্বাস সৃষ্টি করার অন্যতম প্রধান মাধ্যম৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কোম্পানির ব্র্যান্ডিং, খ্যাতি এবং পণ্যের গুণগত পার্থক্য কাঙ্খিত পর্যায়ে বৃদ্ধি করে৷ জিআরআই প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিন-চতুর্থাংশ কোম্পানি সাসটেইন্যাবল রিপোর্ট তৈরিতে জিআরআই এর কাঠামো ব্যবহার করে৷
তিনি আরো বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে “জিআরআই স্ট্যান্ডার্ডস ২০২১ এর উপর ভিত্তি করে সাসটেনেবিলিটি রিপোর্টিং-এর জন্য গাইডেন্স ডকুমেন্ট” চালু করার ফলে এটি একটি সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট তৈরিতে তালিকাভুক্ত, অতালিকাভুক্ত এবং বড় কোম্পানিগুলিকে গাইড করার জন্য প্রতিশ্রুতি এবং সচেতনতা তৈরি করতে সাহায্য করবে। যা তাদের কোম্পানি, সমাজ এবং সামগ্রিকভাবে দেশ উভয়ের পরিবর্তনে সাহায্য করবে। ড. হাসান বাবু উল্লেখ করেন যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ব্যাপকভাবে সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং পরিবেশের দৃঢ়তার উপর জোর দিয়েছে৷ ডিএসই ও জিআরআই-এর সহযোগিতায় সাসটেইন্যাবল রিপোর্টিং নির্দেশিকার উপর এই সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং এই কর্মশালা থেকে সকল তালিকাভুক্ত কোম্পানি লাভবান হবে৷
ড. হাসান বাবু আরো বলেন, সাসটেনেবিলিটি রিপোর্ট এখন মূলধারার ব্যবসায়িক অনুশীলন। যা প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু ও লয়ালিটি বৃদ্ধি করে। আর এর ফলে এক্সটারনাল স্টেকহোল্ডারগন প্রতিষ্ঠানের সঠিত মূল্য এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ সম্পর্কে অবগত হন। সকল মহলের প্রধান চাহিদা কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি রিপোর্ট৷ বিশ্বব্যাপী যেটা গ্রহণযোগ্য৷ বাংলাদেশে কিছু মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী রিপোর্ট করে। কিন্ত আরও অনেক ভাল কোম্পানি এটি করতে পারে৷ এই প্রক্রিয়ায় আমাদের পুঁজিবাজার, জিডিপি এবং অর্থনীতি সবই আরো উচ্চ স্তরে যেতে পারে।
তার আগে ডিএসই’র মহাব্যবস্থাপক মোঃ ছামিউল ইসলাম স্বাগত বক্তব্যে বলেন, আধুনিক ব্যবসায়িক অনুশীলন, একটি কোম্পানির কৌশল এবং দৈনন্দিন কার্যাবলীতে পরিবেশগত, সামাজিক এবং কর্পোরেট গভর্নেন্স (ESG) নীতি এবং অনুশীলনগুলো একীভূত করে৷ আজকের প্রোগ্রামটি GRI স্ট্যান্ডার্ড ২০২১-এর উপর ভিত্তি করে সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্টিংয়ের জন্য গাইডেন্স ডকুমেন্টের লঞ্চিং অনুষ্ঠান। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে কমপ্লায়েন্ট, টেকসই এবং সু-শাসিত এক্সচেঞ্জ তৈরিতে ভবিষ্যতে এর প্রভাব ফেলবে। আমি “GRI স্ট্যান্ডার্ডস ২০২১-এর উপর ভিত্তি করে টেকসই প্রতিবেদনের জন্য গাইডেন্স ডকুমেন্টের লঞ্চিং অনুষ্ঠান” সফল করার জন্য উপস্থিত সকল অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানাই৷ ডিএসই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য প্রশিক্ষণ, সেমিনারের আয়োজন করে এবং জিআরআই স্ট্যান্ডার্ডের মাধ্যমে টেকসই প্রতিবেদনের ব্র্যান্ডিং করার জন্য ডিএসই ক্রমাগত জিআরআইকে সহায়তা করছে। আমরা পুঁজিবাজারের আরও স্টেকহোল্ডারদের সাথে সামনের দিনগুলিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলির জন্য GRI স্ট্যান্ডার্ড ২০২১-এর উপর ভিত্তি করে একটি টেকসই প্রতিবেদন তৈরির চেষ্ঠা অব্যাহত রাখবে৷
জিআরআই সাউথ এশিয়ার নেটওয়ার্কের পরিচালক ড. অদিতি হালদার ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির একটি দেশ। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়িক খাতেও শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত।। একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য হয়ে উঠতে একটি দেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক বাজার কাঠামো অবদান রাখে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম মাধ্যম এবং প্রায় ৭০ বছর ধরে দেশের শিল্পায়ন, অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। অর্থনীতির অগ্রগতির সাথে, ডিএসই দেশীয় এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি পরিপূণ পুঁজিবাজার গড়ে তুলেছে। এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে টেকসই প্রতিবেদন বিশ্বব্যাপী প্রচারণার সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ।
ঢাকাস্থ সুইডেন দূতাবাস-এর সেকেন্ড সেক্রেটারি ফ্রেডরিকা নরেন বলেন, সুশাসন ও স্থায়ীত্ব উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। নতুন এই সাসটেইনেবিলিটি স্টান্ডার্ড অনুশীলন করার ফলে আগামীতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কম্পিটিটিভনেস বৃদ্ধি পাবে। জিআরআই এর মান অনুশীলনের জন্য সুইডেন অত্যন্ত আনন্দিত এবং বাংলাদেশের জনগণের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, দেশের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে, তালিকাভুক্ত বা অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলির মধ্যে সাসটেইনেবিলিটির অনুশীলন করার জন্য, একটি টেকসই প্রতিবেদনের মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জিআরআই, এই সেক্টরে অগ্রগামী হওয়ায়, তাদের মান বিভিন্ন সেক্টরে এর ব্যবহারকারীদের মধ্যে সাসটেইনেবিলিটির বিভিন্ন বিষয় চিহ্নিতকরণ এবং সংজ্ঞায়িত করতে সহায়তা করবে। কর্পোরেট সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট করার উদ্দেশ্যে হলো বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সকল স্টেকহোল্ডারদের সকলের উন্নতির জন্য এই ধরনের একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে এবং এটি জিআরআই ইএসজি ডিসক্লোজারের সাহায্যে খুব অর্জনযোগ্য হতে পারে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জিআরআই সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্কের ম্যানেজার রাহুল সিং, আইওটিএ কনসালটিং বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া এবং সাসটেনেবিলিটি নেক্সাস লি. এর পরিচালক মুনতাসির নাহিদ৷
Leave a Reply