নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চার সদস্যের পদত্যাগের পর কার্যত স্থবির হয়ে গেছে প্রষ্ঠিানটির কার্যক্রম। এছাড়াও চেয়ারম্যান নিয়োগের পর দীর্ঘদিন অসুস্থতার কারনে অফিস না করায় থমথমে বিরাজ করছে প্রতিষ্ঠানটিতে। এরফলে অচলাবস্থা বিরাজ করছে পুরো বীমা খাতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই স্থবিরতা নিরসনে দ্রুত নতুন চারজন সদস্য নিয়োগ দেওয়া জরুরি।
তবে নতুন চার সদস্যের নিয়োগের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানা গেলেও কবে নাগাদ নিয়োগ হবে তা নিশ্চিত করে বলছে না নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেনি। এতে অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে।
আইডিআরএ’র একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চার সদস্যের পদত্যাগের পর বলতে গেলে কোনো কাজই করা যাচ্ছে না। ছোট ছোট কাজগুলো হলেও ডিসিশনের অভাবে বড় কাজ আটকে আছে।
জানা গেছে, গত ৭ নভেম্বর আইডিআরএ’র চার সদস্য বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্য খোকন (প্রশাসন), মো. দলিল উদ্দিন (আইন), মো. নজরুল ইসলাম (নন-লাইফ) এবং কামরুল হাসান (লাইফ) পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে পদগুলো ফাঁকা রয়েছে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। দায়িত্ব নিয়েই অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন খাতে সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেয়। আর্থিক খাতের সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং আইডিআরএ চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়। এ ছাড়া আর্থিক খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে। তার অংশ হিসেবে আইডিআরএ’র চার সদস্যকে পদত্যাগের ‘পরামর্শ’ দেওয়া হয়।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংস্কারের অংশ হিসেবে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা বা সরিয়ে দেওয়া খুবই সহজ সমাধান হলেও পদগুলো ফাঁকা থাকায় কী কী অসুবিধা হতে পারে তা আগে থেকে ভেবে দেখার দরকার ছিলো।
আইডিআরএ’র ঊর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারের উচিত ছিলো নতুন চার সদস্য ঠিক করে তাদের পদত্যাগ করতে বলা। চার সদস্যের পদত্যাগে পুরো বীমা খাতে যে সমস্যা হতে পারে তা চিন্তা না করেই তাদের পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।
এদিকে চার সদস্যদের পদত্যাগের পর নতুন করে কারা এই পদে আসছেন তা নিয়ে খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। তারা বলছেন, পূর্বের সদস্যদের কারো কারো ‘নৈতিক স্খলনের’ কারণে পুরো বীমা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার সৎ ও কর্মঠদের নিয়োগ দেওয়ার আহ্বানও জানান তারা।
তারা বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করলেও ‘রাজনৈতিক বিবেচনাতেই’ আগে নিয়োগ হয়েছে। এবার যেন নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় মূখ্য না হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, আইডিআরএ’র সদস্যের চারটি পদ ফাঁকা থাকায় কাজের গতি কমলেও সরকার এবার সদস্য পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ বিচার-বিশ্লেষণ ও যাচাই-বাছাই করছে। ফলে কিছুটা দেরি হচ্ছে।
সূত্রটি জানায়, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের পর চূড়ান্ত নিয়োগ হলেও এবার হয়তো তেমন কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ নাও করা হতে পারে। যোগ্য ব্যক্তিদের সরকার সরাসরি নিয়োগ দিতে পারে।
Leave a Reply