1. baiozidkhan@gmail.com : admin_bizp :
জীবন বীমায় ৩ লাখ ৪৭ হাজার পলিসি তামাদি - Business Protidin
শিরোনাম :
প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফের উন্নয়ন সভা অনুষ্ঠিত দেশে সরকারি ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের’ কার্যক্রম শুরু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ‘ক্ষুদ্র ঋণ ব্যাংক’ গঠনের উদ্যাগ সরকারের পঞ্চমবারের মতো সাউথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন সোনালী লাইফের বেতন কমছে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ কর্মীদের ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডি হতে লাগবে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা লাভেলো আইসক্রিমের এমডির পরিবারসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠান টিকে থাকা ও সফলতার মৌলিক ভিত্তি: আমির খসরু দারিদ্র্যসীমার নিচে যাওয়ার ঝুঁকিতে দেশের ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ: বিশ্বব্যাংক ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে কঠোর নির্দেশনা জারি

জীবন বীমায় ৩ লাখ ৪৭ হাজার পলিসি তামাদি

  • সর্বশেষ আপডেট : রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিশেষ প্রতিনিধি: দেশে ব্যবসা পরিচালনা করা ৩৬টি জীবন বীমা কোম্পানি থেকে চলতি বছরের ৯ মাসে পলিসি বন্ধ করেছেন তিন লাখ ৪৭ হাজার জন গ্রাহক। বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) ও পুঁজিবাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে বীমা খাত। তবে বিভিন্ন কারণে সম্ভাবনাময় এই খাতটি ‘অনাস্থায়’ নিমজ্জিত। সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ থাকলেও ফিরছে না শতভাগ আস্থা। উপরন্তু পুরো খাতে তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা। এর সঙ্গে বছর বছর পলিসি তামাদি বা বন্ধ হওয়ায় সংকট দীর্ঘ হচ্ছে।

আইডিআরএর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে বীমা পলিসি ছিল প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ। ২০২৩ সালে তা কমে হয়েছে ৮৫ লাখ ৮৮ হাজারে। আর চলতি বছরের ৯ মাসেই কোম্পানিগুলো হারিয়েছে ৩ লাখ ৪৭ হাজার গ্রাহক। সব মিলিয়ে গত ১৫ বছরে বীমা কোম্পানি ছেড়েছেন প্রায় ৩০ লাখ গ্রাহক।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর পলিসি তামাদি হয়েছে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৮৭৮টি। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি পলিসি তামাদি হয়েছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ৫৬ হাজার ৩৩৮ জন গ্রাহক তাদের পলিসি বন্ধ করেছেন।

৯ মাসে পলিসি তামাদিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পিএলসি। এই কোম্পানিটির পলিসি তামাদি হয়েছে ৫৬ হাজার ৯৯টি। পলিসি তামাদিতে তৃতীয় স্থানে রয়েছে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এই কোম্পানিটির পলিসি বন্ধ হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৭৮টি।

২৩ হাজার ২৩টি পলিসি বন্ধ নিয়ে তামাদিতে চতুর্থ অবস্থানে আছে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসি। পঞ্চম স্থানে রয়েছে আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এই কোম্পানির পলিসি বন্ধ হয়েছে ২১ হাজার ৯১৭টি।

তামাদি একটি আরবি শব্দ, এর আভিধানিক অর্থ কোনো কিছু বিলুপ্ত হওয়া কিংবা বাধাপ্রাপ্ত হওয়া। বীমা ব্যবসার সঙ্গে তামাদি শব্দটি বহুল পরিচিত। পলিসিহোল্ডার যদি সময়মতো প্রিমিয়াম জমা না দেয় তাহলে নির্দিষ্ট সময় পরে পলিসিটি তামাদি বা বন্ধ হয়ে যায়। আর পলিসি বন্ধ হলে গ্রাহক বীমা কাভারেজ থেকে বঞ্চিত হন। অনেক ক্ষেত্রে জমা দেওয়া টাকাও পান না।

পলিসি তামাদি হয়ে যাওয়ার জন্য বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা কয়েকটি কারণের কথা বলছেন। তাদের মতে, জীবনবীমা কোম্পানির প্রতিনিধিরা (এফএ) পলিসি খোলার জন্য যতটা মনোযোগী থাকেন, পরে আর সেই মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না। পলিসি গ্রাহকদেরও সচেতনতার অভাব রয়েছে। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও রয়েছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ। অসাধু শ্রেণির বীমা প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রিমিয়াম নিয়ে তা আত্মসাতের ঘটনাও রয়েছে।

পলিসি তামাদি নিয়ে বীমা পেশাজীবীদের প্রশিক্ষণ দেয়া রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির পরিচালক এস এম ইব্রাহিম হোসেন বলেন, বীমা পলিসি বন্ধ হওয়া কোম্পানি এবং গ্রাহক উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। পলিসি বন্ধ হলে একজন গ্রাহক অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য বীমা কোম্পানি থেকে যে সুযোগ পেতেন, সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। একই সঙ্গে এটি বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য রাজস্ব ক্ষতি এবং কোম্পানির আর্থিক স্থিতিশীলতা ও গ্রাহক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক বলেন, অনেকেই ঝোঁকের মাথায় পলিসি খোলেন; কিন্তু পরে আর তা চালিয়ে নিতে চান না। আবার প্রথম বছরের তুলনায় পরবর্তী বছরগুলোতে কম কমিশন থাকায় প্রতিনিধিরাও আগ্রহ হারান। তাই পরবর্তী বছরগুলোর কিস্তি আদায়ে তারা সচেষ্ট থাকেন না। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেক মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা সংসারের খরচ মেটাতে সঞ্চয় ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে অনেকে সময়মতো প্রিমিয়াম জমা দিতে পারছেন না, এতে পলিসি বন্ধ হয়েছে।

জেনিথ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম নুরুজ্জামান বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাইলে বীমাকে এড়িয়ে যাওয়া বা অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। এ জন্য বীমার প্রতি সরকারের সুনজর যেমন জরুরি, তেমনি কোম্পানিগুলোরও কিছু দায়িত্ব আছে। পলিসি তামাদি রোধে সবার আগে কোম্পানিকেই দায়িত্ব নিতে হবে। সময়মতো বীমা দাবি পরিশোধ, এজেন্টদের রিনিউয়াল প্রিমিয়াম আদায়ের গুরুত্ব অনুধাবন করানো এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে পলিসি তামাদির হার কমে যাবে।

ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার সাধু বলেন, গ্রাহকরা অনেক সময় নানা কারণে আর্থিক সংকটে পড়ে সময়মতো প্রিমিয়ামের টাকা পরিশোধ করতে পারেন না। এতেও কিছু পলিসি কমে যায়।

প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জালালুল আজিম বলেন, চলতি বছরে পলিসি বন্ধের অন্যতম কারণ ছিল জুলাই-আগস্টের আন্দোলন। এটি মানুষের আয়ে প্রভাব ফেলেছে। তাছাড়া কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ অনেক এলাকায় আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বন্যার কারণে এজেন্টরা সময়মতো প্রিমিয়াম আদায় করতে না পারায় অনেক পলিসি তামাদি হয়েছে।

তবে বন্ধ হয়ে যাওয়া বীমা পলিসির সংখ্যা কমাতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষের পরিচালক ও মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া পলিসির সংখ্যা কমাতে আইডিআরএ আগেও কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করেছে। বর্তমানেও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই তামাদির হার কমে যাবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের সোশ্যাল মিডিয়া আইকনে ক্লিক করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2025 Businessprotidin.com
Site Customized By NewsTech.Com