নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রবাসী আয় হিসেবে ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন এক ব্যবসায়ী, সাংবাদিকদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে গত সোমবার এই তথ্য জানান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। এরপর বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা তৈরি হয়। সাংবাদিকেরাও এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন।
এরফলে আলোচনায় এসে খবরের শিরোনাম হন সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান। যা এক কথায় বলা যায়, পাচার নয়, বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা এনে সংবাদের শিরোনাম হলেন প্রতিক গ্রুপের ফারুকী হাসান।
জানা যায়, বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় হিসেবে ‘৭২১ কোটি টাকা’ দেশে আনেন প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান। এই টাকা আনা নিয়ে চলছে আলোচনা, তবে করমুক্ত ও প্রণোদনার সুযোগে বৈধ আয়ের অর্থই তিনি দেশে এনেছেন বলে দাবি করছেন।
দেশের প্রথম সারির একাধিক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফারুকী হাসান বলেন, তিনি ঢাকার কর অঞ্চল-৫ এর একজন করদাতা। এই বিপুল অর্থ নিয়ম মেনে ওয়েজ আর্নাস হিসেবে তিনি তার কর নথিতে দেখিয়েছেন। প্রবাসী আয়ের ওপর কর না থাকায় তিনি বিদেশ থেকে আনা ঐ অর্থের ওপর কোনো কর দেননি। ওয়েজ আর্নাস হিসেবে উক্ত টাকার বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর তাকে প্রত্যয়ন সনদও দিয়েছেন ।
ফারুকী হাসান জানান, তিনি চীনের সরকারি বিভিন্ন জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের হয়ে এজেন্ট ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। ২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চীনের সরকারি বিভিন্ন জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১৫টি জাহাজ কিনেছে। এসব জাহাজ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে তিনি এজেন্ট ও পরামর্শক সেবা দেন। তার বিনিময়ে ১৩ বছরে ৭৩০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ এজেন্ট ও পরামর্শ মাশুল পেয়েছেন। এই আয়ের ওপর চীনে করও পরিশোধ করেছেন। পরে সেই অর্থ প্রবাসী আয় হিসেবে বাংলাদেশে এনেছেন। তবে এ জন্য প্রবাসী আয়ের বিপরীতে নগদ প্রণোদনা প্রাপ্য হলেও তিনি তা নেননি।
ফারুকী হাসান জানান, তাঁর নামে দেশে কোনো ব্যাংকঋণ নেই। চীন থেকে তিনি তাঁর আয়ের অর্থ ইস্টার্ন ব্যাংকের হিসাবের মাধ্যমে বৈধভাবে দেশে এনেছেন। একবারে এই অর্থ তিনি দেশে আনেননি। কয়েক বছর ধরে ধাপে এনেছেন।
তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আনা অর্থে আমি চারটি কারখানা করেছি। এসব কারখানায় প্রায় তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। যখন যে বছর আমি এই অর্থ এনেছি, প্রতিবারই এনবিআরের পক্ষ থেকে আমাকে প্রত্যয়ন সনদ দেওয়া হয়েছে। এখন কেন এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। বিদেশে সেবা দিয়ে দেশে অর্থ এনেছি, এটা তো আমার অপরাধ হতে পারে না।’
সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান জানান, তিনি বাংলাদেশের পাশাপাশি কানাডায়ও বসবাস করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার আয় কত, তা আয়কর ফাইলে সব দেখানো আছে। কোনো কিছু গোপন করতে চাইলে আমি তা ফাইলে দেখাতাম না। আমি সিরামিক রপ্তানি করে চারবার বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হয়েছি। এখন কেন আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে, এটা বুঝতে পারছি না।’ এখন এনবিআরের দিক থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়ায় এনবিআরের সঙ্গে কথা বলতে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।
তার আইনজীবি ব্যারিস্টার রেদওয়ান হোসেনের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন জনাব ফারুকী হাসানের ব্যক্তিগত আয়করের তথ্যাদি এনবিআরের নিকট সংরক্ষিত, তাহা ভুলভাবে মিডিয়ায় উপস্থাপন হওয়ায় তার ক্লায়েন্ট ফারুকী হাসান ও প্রতীক গ্রুপের ব্যবসায়িক এবং সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে। উনি বৈধ চ্যানেলে বৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দেশে এনেছেন এবং তা আয়কর ফাইলে দেখিয়েছেন । জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী উনি প্রতি বছর আয়কর দাখিল করেন এবং সর্বশেষ দাখিলকৃত আয়কর রিটার্ন করবর্ষ ২০২৪-২৫ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত। ব্যারিস্টার রেদওয়ান আরো বলেন বৈদেশী মুদ্রা দেশে এনে যারা বিনিয়োগ করবে তাদের উৎসাহ ও সম্মান দেয়া উচিত এবং অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আজ অনেক বাংলাদেশি বিশ্বজুড়ে সফল ব্যবসাহী । দেশে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা এনে বিনিয়োগ করে অসম্মানিত হতে হলে অনেক এ অন্যত্র বিনিয়োগ করার চিন্তা করবে।
সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসানের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। ২০০১ সালে পাড়ি দেন কানাডায়। পরে দেশে ফিরে এসে ব্যবসা শুরু করেন। একে একে গড়ে তোলেন প্রতীক সিরামিক, প্রতীক ডেভেলপার, হোটেল লেক ক্যাসেল, প্রতীক ফুড অ্যান্ড অ্যালাইড, প্রতীক বোন চায়না লিমিটেড, প্রতীক লজিস্টিক, প্রতীক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, চেরি ইন্টারন্যাশনাল।
২০০১ পরবর্তী কানাডায় অবস্থানকালে কিছুদিন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও পরবর্তীতে রাজনীতি ছেড়ে পুরোপুরি ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছেন তিনি। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কারখানার পাশাপাশি তিনি বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকেরও উদ্যোক্তা পরিচালক।
Leave a Reply