নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে বীমা কোম্পানির সিইও পদে যোগ্য লোকের সংকট রয়েছে। মালিকরা দাবি করেন, উপযুক্ত প্রার্থী পাচ্ছি না। অথচ বীমা কোম্পানিগুলো নিয়ম মেনে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেয় না। যার ফলে বীমা কোম্পানিগুলোতে যোগ্য সিইও তৈরিতে বড় বাঁধা বলে মন্তব্য করেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম।
তিনি বলেন, যেহেতু একজন কর্মকর্তাকে মুখ্য নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ পেতে হলে দুই বছর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চাকরি করার শর্ত রয়েছে, এই জায়গায় কোম্পানিগুলো একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রাখছে যার ফলে অনেকে যোগ্য তৈরি হয়ে আসতে পারছে না। অথচ অন্য পেশা থেকে এনে বীমা খাতের গুরুত্বপূর্ণ পদটিতে চাকরি করছে এমন কয়েকটি কোম্পানিকে ভালো করতে দেখছি। তাই আমরা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের বীমা কোম্পানির সিইও হিসেবে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি, যা স্টেকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত হবে।
বুধবার (২ জুলাই) আইডিআরএ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান আইন ও বিধিমালার সীমাবদ্ধতার কারণে সংস্থার কাজ কার্যকরভাবে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।বর্তমানে বীমা কোম্পানিগুলোর নিবন্ধন নবায়ন ফি হাজারে ১ টাকা। এই অর্থ দিয়ে শুধু রুটিন ব্যয় নির্বাহ হয়, কোনো উদ্বৃত্ত থাকে না। তাই নিবন্ধন নবায়ন ফি ১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
আসলাম আলম বলেন, “বর্তমানে সংস্থার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ১২৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে এবং মামলা জটিলতা ক্রমেই বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক কাজগুলোতে আইডিআরএ অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছে। এই কারণে বীমা আইন সংশোধন ও বীমা রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা কার্যকর হলে আইডিআরএ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
ড. আসলাম আলম আরও জানান, ১৯টি বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ দীর্ঘদিন শূন্য থাকলেও আইনগত শিথিলতার কারণে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, “আমাদের পক্ষে কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয় কারণ আইনে সেজন্য আমাদের কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি।” তবে প্রস্তাবিত বীমা রেজল্যুশন অধ্যাদেশে বোর্ডের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে এবং প্রয়োজনে বোর্ড ভেঙে পুনর্গঠন করা যাবে।
আইডিআরএ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বীমা খাতের ৩২টি প্রতিষ্ঠান উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে; যার মধ্যে ১৫টি জীবন বীমা ও ১৭টি সাধারণ বীমা কোম্পানি। ৩৬টি জীবন বীমা কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৬টি ভালো অবস্থানে আছে, বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে। দেশের ৪৬টি সাধারণ বীমা কোম্পানির মধ্যে ১৭টি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
বীমা দাবির দ্রুত নিষ্পত্তি এবং খাতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন আইন ও বিধিমালা সংস্কারের কাজ চলছে। ব্যাংক রেজুলেশনের আদলে বীমা কোম্পানির রেজল্যুশন প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে, যা একীভূতকরণ, অবসায়ন ও অধিগ্রহণের মতো পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ দেবে। বর্তমানে জীবন বীমায় ৪৫ শতাংশ ও সাধারণ বীমায় ৪৭ শতাংশ দাবি অপরিশোধিত রয়েছে, যা গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা সংকট তৈরি করেছে।
ড. এম আসলাম আলম স্বীকার করেন, “২০২৪ সালে মাত্র আমাদের কাছে ২৪,৮৫২টি অভিযোগ এসেছে, কিন্তু জনবল সংকটের কারণে এসব অভিযোগ যথাযথ তদারকি করা সম্ভব হয়নি।” আইডিআরএতে ১৬০ জন অনুমোদিত জনবল থাকলেও মাত্র ১০৭ জন কর্মরত আছেন। তিনি জানান, জনবল বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, “আইডিআরএ একটি স্বচ্ছ এবং কার্যকর নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করতে চায়, তবে এ জন্য আইন প্রয়োগের সহায়ক পরিবেশ এবং শক্তিশালী কাঠামো প্রয়োজন।”
Leave a Reply