নিজস্ব প্রতিবেদক: নানান সংকট চলছে দেশের শেয়ারবাজারে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আস্থাহীনতা। সবচেয়ে বেশি আস্থার সংকটে রয়েছে ব্যাংক খাত। বর্তমানে শেয়ারবাজারে ১৮টি ব্যাংকের শেয়ার ফেস ভ্যালু বা ১০ টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে। এর মধ্যে ৫টি ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৫ টাকারও নিচে। এক কাপ চায়ের দামে এখন একাধিক ব্যাংকের শেয়ার কেনা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাতে নানামুখী অনিয়ম ও মালিকানাধীন স্বার্থের জোটবদ্ধ দখলের কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট হয়েছে। ফলে অনেক ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। সুশাসনের অভাবে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থার চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
দেশের পুঁজিবাজারের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত হতো ব্যাংক খাত। এক সময় ভালো লভ্যাংশের আশায় বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করতেন। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বড় অংশই এই খাতে সক্রিয় থাকতেন। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার দাম অস্বাভাবিকভাবে পড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুরো পুঁজিবাজারে।
দেশের তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা বর্তমানে ৩৬টি। এর মধ্যে ফেস ভ্যালু বা ১০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে ১৮ ব্যাংকের শেয়ার। যার মধ্যে ৫টির শেয়ারের দাম ৫ টাকার নিচে। এ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ৪ টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ৩ টাকা ২০ পয়সা, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ২ টাকা ৮০ পয়সা, ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার ৩ টাকা ৭০ পয়সা এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার ৩ টাকা ১০ পয়সায় অবস্থান করছে।
ফেস ভ্যালুর নিচে থাকা বাকি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে-
সাউথইস্ট ব্যাংকের শেয়ার ৭ টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ৭ টাকা ৩০ পয়সা, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংকের শেয়ার ৬ টাকা ৮০ পয়সা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ার ৭ টাকা ১০ পয়সা, ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার ৬ টাকা ৯০ পয়সা, এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার ৬ টাকা ১০ পয়সা, এনআরবি ব্যাংকের শেয়ার ৯ টাকা ৬০ পয়সা, এনসিসি ব্যাংকের শেয়ার ৯ টাকা ৯০ পয়সা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ার ৭ টাকা ৯০ পয়সা, আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার ৫ টাকা ৭০ পয়সা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ার ৫ টাকা ২০ পয়সা, এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার ৫ টাকা ৬০ পয়সা এবং এবি ব্যাংকের শেয়ার ৬ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।
অপরদিকে, ফেস ভ্যালুর ওপরে থাকলেও ১০টি ব্যাংকের শেয়ার দাম ২০ টাকার নিচে অবস্থান করছে।
এর মধ্যে রয়েছে- আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ১৭ টাকা ২০ পয়সা, ব্যাংক এশিয়া ১৫ টাকা ১০ পয়সা, সিটি ব্যাংক ১৯ টাকা, ঢাকা ব্যাংক ১০ টাকা ৬০ পয়সা, যমুনা ব্যাংক ১৬ টাকা ৯০ পয়সা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ১০ টাকা ৮০ পয়সা, রূপালী ব্যাংক ১৭ টাকা ২০ পয়সা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ১৬ টাকা ৮০ পয়সা, ট্রাস্ট ব্যাংক ১৮ টাকা এবং ইউসিবি ব্যাংক ১০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।
এছাড়া উত্তরা ব্যাংক ২১ টাকা ১০ পয়সা, প্রাইম ব্যাংক ২১ টাকা ৭০ পয়সা, ইস্টার্ন ব্যাংক ২২ টাকা ৪০ পয়সা, মিডল্যান্ড ব্যাংক ২৪ টাকা ৯০ পয়সা, পূবালী ব্যাংক ২৫ টাকা ১০ পয়সা, ইসলামী ব্যাংক ৩৩ টাকা ৬০ পয়সা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ৩৯ টাকা ১০ পয়সা ও ব্র্যাক ব্যাংক ৪৯ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ব্যাংক খাতের এই সংকট পুঁজিবাজারের জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ। বাজার মূলধনের বড় অংশজুড়ে রয়েছে ব্যাংক। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংক খাতের কাঠামোগত সংস্কার, দুর্নীতি দমন ও সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।
Leave a Reply