1. baiozidkhan@gmail.com : admin_bizp :
বিনিয়োগকারীরা জুয়াড়িদের সুযোগ না দিলে শেয়ার কারসাজির সুযোগ পাবে না: শিবলী রুবাইয়াত - Business Protidin

বিনিয়োগকারীরা জুয়াড়িদের সুযোগ না দিলে শেয়ার কারসাজির সুযোগ পাবে না: শিবলী রুবাইয়াত

  • সর্বশেষ আপডেট : রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে আরও চার বছরের জন্য পুনঃনিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি তার বিগত চার বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা ও আগামী চার বছরের কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন বিজনেস প্রতিদিনের সঙ্গে। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন বিজনেস প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার আবরার ফাহাদ।

বিজনেস প্রতিদিন : মার্কেটে যারা কারসাজি করে তাদের পর্যাপ্ত শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না বলে মার্কেটে আলোচনা হচ্ছে, এই ব্যাপারে আপনার অভিমত কি?

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আমরা এখন শাস্তি দেওয়া বন্ধা করে দেবো। কারণ আপনারা একজন জুয়াডির পিছনে দৌড়াবেন। জুয়াডি বানাবেন সে কোনটা কিনে সেটা কিনবেন। কিনে হাজার হাজার লোক তার সাথে অংশগ্রহন করবেন, করার পর ঢাকা স্টক একচেঞ্জ ধরবে। ধরার পর ফাইল আমাদের কাছে পাঠাবে আমরা তার শুনানি নিবো তারপর শাস্তি দিবো। তারপর অভিযুক্ত ব্যক্তি আপিল করবে এর মধ্যে আপিলে কোর্টেও চলে যেতে পারে। এগুলো করতে কমপক্ষে ৬ মাস সময় লাগে। এর মধ্যে তো সব কাজ শেষ হয়ে যায়। একটা জুয়াডিকে মানুষ যদি উৎসাহিত না করে তাইলে সে কোন দিনে জুয়াডি হতে পারে না। এখন কথা হচ্ছে আপনারা তার পিছনে ছুটে তাকে জুয়াডি বানান এবং সব হারালে এবার দোষ দেন বিএসইসি বা ডিএসইকে। আমরা যতক্ষণ ধরবো বা বিচার করবো তার মধ্যের সময়ে তো টাকা চলেই গেল। তো আমরা তাকে জরিমানা করলাম। জরিমানার টাকা আমরা পেলাম এতে করে সাধারণ বিনিয়োগকারী তো তার টাকা পেল না। এখানে স্পষ্ট কথা হলো আপনারা জুয়াডি কাউকে জানলে তার পিছনে ছুটেন কেন? এর পর বলেন আমরা ব্যবস্থা নেই না।

বিজনেস প্রতিদিন: গত ৪ বছরে আপনার সফলতাগুলো কি কি?

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আমি ঠিক সফলতা বলবো না। আমরা চেষ্টা করেছি প্রায় বন্ধ থাকা একটা মার্কেটকে শুরু করা। এত খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে কখনও শেয়ারবাজার গেছে বলে মনে হয় না। দুই বছর করোনা আবার দুই বছর ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ। এ সময়টাতে আমরা কাজ করেছি মিসিং কমপ্লায়েন্সগুলো নিয়ে। এখন সেগুলো প্রয়োগের দিকে আমাদের যেতে হবে। ক্যাপিটাল মার্কেট বলতে সবাই ঢাকা স্টক একচেঞ্জকে ভাবে। এটা তো ক্যাপিটাল মার্কেট না এটা প্রাইমারি মার্কেট। এখানে ডেরিভেটিভ মার্কেট, বন্ড মার্কেট আছে, ডেবথ মার্কেট আছে এখানে কমোডিটি একচেঞ্জ আছে। এছাড়াও এখানে আরও অনেক ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট বানানো যায়, যেগুলো বাংলাদেশে ৫০ বছরে জানতো না। এখন কিন্তু সবার জানা শুরু হয়ে গেছে। যার কারণে বন্ড মার্কেট তৈরি শুরু হয়েছে। আমাদের ডেরিভেটিভ মার্কেট নিয়ে ঢাকা স্টক একচেঞ্জ কাজ করা শুরু করে দিয়েছে।

বিজনেস প্রতিদিন : শেয়ারবাজারে ডিএসইর কাজ নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা আছে, সেই জায়গায় আপনার বক্তব্য কি?

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: ডিএসই থেকে শুরু করে এখন সবাইকে অনেক স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছি। ডিএসইকে বলা হয়েছে ইনডেক্স মুভমেন্ট ট্রানজেকশন এগুলোতে আমরা আর যাবো না। আইপিও ভালো আসবে নাকি খারাপ আসবে এগুলো আমাদের কাজ না। এতো দিন আপনাদের এগুলোতে সাহায্য করেছি। আপনারা এখন থেকে ভালো ভালো কোম্পানি আনবেন এটা আপনাদের কাজ। এর আগে আইপিওর ক্ষেত্রে আমরা হস্তক্ষেপ করেছি কারণ বোর্ডেও কিছু দুষ্ট লোক থাকে হুট করে যাকে ইচ্ছা তাকে অনুমোদন দিয়ে দেয়। সেজন্য আমরা বাধা দিয়েছি যাতে এমনটা করতে না পারে। এখনকার বোর্ডের প্রতি আস্তা রয়েছে তারা একাজ ভালোভাবে করবে বিশ্বাস করি। তারা এখন থেকে আইপিওর কাজ করুক, ভালো কোম্পানি আনুক যাতে মার্কেটটা ভালো করতে পারে। এক্ষেত্রে আমরাও আর আইন পরিবর্তন করবো না। দেখবো ডিএসই কি চায়, তাদেরকে সাহায্য করবো। এটাই হবে আমাদের আগামী ৪ বছরের পলিসি। এখন থেকে আমরা নতুন কমপ্লায়েন্সগুলো উন্নয়ন করবো। ডিএসই পুরনো কাজগুলো দেখতে থাকুক আর আমরা নতুন কাজ নিয়ে মনোযোগি হবো।

বিজনেস প্রতিদিন: বন্ড মার্কেট নিয়ে চার বছরের অগ্রগতি কেমন হয়েছে বলে মনে করেন?

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: মার্কেট ক্যাপ তো কখনও ইক্যুটি দিয়ে করা যায় না। ইক্যুটির সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ম একটা লেভেল আছে, এর বাইরে আর কোম্পানি নিতে পারে না। কিন্তু কোম্পানির ডেবথ অনেক লাগে, লং টার্ম ফাইন্যান্স দেখতেই হয়। এই মিসিংটা থাকাতে ইক্যুইটি নিয়ে অনেক চলচাতুরি হয়।

বিজনেস প্রতিদিন: ২০২০ সালে যখন দায়িত্ব নিয়েছেন তখন মার্কেটে বড় সমস্যা ছিল আস্তাহীনতা, সে জায়গাটা চার বছরে কতটুকু উন্নয়ন করতে পেরেছেন?

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আস্তাহীনতা শব্দটা সবাই ব্যবহার করে তবে এর সংজ্ঞা বা কি হইলে কি হবে এটা কেউ সঠিকভাবে বলতে পারবে না। কি করলে আস্তা আসবে যতদিন পর্যন্ত বুঝতে পারবো না ততদিন কিছু বলতে পারবো না। কারণ মার্কেট পড়ে গেলে বলে আস্তা নাই আবার মার্কেট উঠলে বলবে আস্তা আসছে। এটাতো আস্তার সংজ্ঞা না । উঠতি মার্কেট যেমন মানুষের দরকার আছে আবার পড়তি মার্কেটেও দরকার আছে। পড়তি মার্কেট না থাকলে ভালো ইনভেস্টর আসে না। যেমন ইলিশ মাছ কম দাম হলে কিনে আবার বেশি দাম হলে কিনে না। তেমনি কম দামে শেয়ার কেনার জন্য একটা মার্কেট মানুষ খুঁজে। তবে এটা আস্তার সংজ্ঞা হতে পারে না। তাই এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না। কারণ উঠা-নামা দুইরকম মার্কেট নিয়েই মানুষের আগ্রহ আছে।

বিজনেস প্রতিদিন: অনেকে বলে ভালো কোম্পানি আসছে না, আপনি দায়িত্ব পাওয়ার পর যেসব কোম্পানি আসছে সেগুলো নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আমাদের সময়ে ৭০ শতাংশ আসছে ব্যাংক এবং ইন্স্যুরেন্স সেক্টর থেকে এখন ব্যাংক আর ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে যদি বলে ভালো না। তাহলে আমরা কাদের মার্কেটে আনবো। রেগুলেটরি থেকে ব্যাংক-ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারবাজারে আসার বাধ্যবাধকতা আছে আমরাও তাদের অনুমোদন দিয়েছি। কিন্তু আমরা কোম্পানি অনুমোদন দিয়েছি কম। যদি বলি চার বছরে হয়তো ১৫-২০ টা হবে। কারণ এর আগে যেগুলো দেওয়া হয়েছিল সেগুলো প্রসেসে আটকে ছিল। সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল স্যার যাওয়ার আগে। সেগুলো আমরা একটা প্রসেস করে প্রথম ১ বছরের মধ্যে ক্লিয়ার করি। সেখানে প্রায় ৩০ টার মত কোম্পানি ছিল। কিন্তু আমাদের মেয়াদে বেশি দেওয়া হয়নি।

বিজনেস প্রতিদিন: আমাদের মার্কেট থেকে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে এ ব্যাপারে যদি কিছু বলতেন?

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আমাদের মার্কেটে যে লোকটা ৮৫ টাকা করে বিনিয়োগ করতে আসছিল, তার ২০ টাকা লাভ হয়েছিল। এখন তার এই ২০ টাকা নাই কারণ এখন ডলার একচেঞ্জ রেট হয়ে গেছে ১১০ টাকা ১১৫ টাকা। ১ ডলার কিনতে তার এখন ১১৫ টাকা লাগছে। সে লাভ করছে ২০ টাকা আর একচেঞ্জ রেটের কারণে তার লাভটাই সে নিতে পারছে না। বরং আসলটাই আসছে না কারণ তার ১ ডলার হয়ে যাচ্ছে ৮০ সেন্ট। সেজন্য তারা ভাবছে যদি ডলার রেট আরও বাড়ে তাহলে তার আসল টাকা তো আগে কিছু গেছে আরও চলে যাবে। এই ভয়ে তারা বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে। এখন যখন ডলার রেট স্বাভাবিক হচ্ছে দেখা যাচ্ছে বিদেশিদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি কমে গেছে। এখন হয়তো বিদেশিরা আবার শেয়ার ক্রয় করবে, যেহেতু ডলার রেট কমছে।

বিজনেস প্রতিদিন : মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে একটা প্রত্যাশা ছিল কিন্তু সে অনুযায়ী সফলতা আসেনি। এটা নিয়ে কোন পরিকল্পনা আছে কিনা?

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আমরা আগামী চার বছর মিউচুয়াল ফান্ডকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিবো। ট্রেজারি বন্ড একটা সময় কেউ কিনতে পারতো না। এখন সবাই কিনতে পারছে। প্রতিদিন প্রায় ১ থেকে দেড় কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। এটা একসময় আগুণের মত পপুলার হবে এত দ্রুত আগাচ্ছে।

বিজনেস প্রতিদিন : এসএমই খাত নিয়ে খুব ভালো একটা আশা তৈরি হয়েছিল, এই খাতের অগ্রগতি কেমন হবে বলে মনে করছেন?

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: এসএমই খাতের কোম্পানিগুলো আসার জন্য অনেক প্রস্তাব আসছে। সবগুলো আমরা দিচ্ছি না। কারণ যারা আসছে তাদের থেকে শুধু ভালোগুলো দেওয়া হচ্ছে। এত যাচাবাছাইয়ের পরও আমরা দুই একটা ভুল দিয়ে পেলেছি। এজন্য আমরা চিন্তা করছি আরও বেশি যাছাই করে দেওয়া ভালো, নয়তো বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ আমরা এখনও অনেক চেষ্টা করছি অডিট রিপোর্ট ও ইস্যু ম্যানেজার এদের জালিয়াতিগুলো বন্ধ করতে। আমরা কখন ভুল করি যখন এরা আমাদের ভুল রিপোর্ট ও অ্যাকাউন্টস দেয়। এরা মাঠে গিয়ে কোম্পানির সাথে কাজ করে। আমরা তো মাঠে গিয়ে কোম্পানির সাথে কাজ করি না। তবে এখন মনে হচ্ছে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টসগুলোর ৯৫ শতাংশ ভালো হয়ে গেছে। এখন আর ভুল অ্যাকাউন্টস দেয় না। ইস্যু ম্যানেজারদেরও অনেক শাস্তিমুলক ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে। এক কথায় এখন অনেকটা ভুল তথ্য দেওয়া কমে গেছে। তবে ৪-৫ শতাংশ যেটা আছে সেটাও ঠিক হয়ে যাবে। তারা কোন সমাধার পাচ্ছে না সুতারাং তাদের টিকে থাকার সুযোগ নেই।

বিজনেস প্রতিদিন : ভালো কোম্পানি আনার ক্ষেত্রে স্টক একচেঞ্জের কি ভুমিকা হওয়া উচিত বলে মনে করছেন?

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: কোম্পানিগুলোকে বুঝাতে হবে। তারা আসছে না কেন? তারা আসে না কস্টের জন্য। মরিটরিং সুপারভিশনের জন্য। মরিটরিং সুপারভিশনে ভয় কারা পায়, যারা ভালো তারা তো ভয় পাওয়ার কথা না। এনবিআরের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে অতালিভুক্ত কোম্পানির কর হার আরও বাড়িয়ে দিতে। আমরা বলি না টেক্স কমাই দিতে বরং আমাদের অনুরোধ তারা তালিকাভুক্ত না তাদের টেক্স বাড়াই দেওয়া হোক। তাহলে হয়তো আমাদের এখানে ভালো কোম্পানি আসবে। তাহলে কোম্পানিগুলোর কস্টটা কাভার হয়ে যাবে। লিস্টিং হওয়ার পরে মনিটরিং সুপারভিশনের পিছনে যে খরচ সেটা অনেক। সেটা অনেকে খরচ করতে চায় না।

বিজনেস প্রতিদিন : মার্কেটে গুজব বন্ধ করতে কি ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছে, এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের জন্য আপনার কি পরামর্শ থাকবে?

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আমরা হাজারবার নিষেধ করেছি আপনারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট দেখে সিদ্ধান্ত নিবেন না। আগে তো আমরা এরেস্টের বিষয়ে কিছুই বলতাম না। এবার আমরা দেখাই এরস্ট করিয়েছি তিন জনকে। এখন থেকে কেউ যদি শেয়ারবাজার নিয়ে কোন পোস্ট দেয় সাথে সাথে তাকে এরস্ট করা হবে। যে কোন বিষয়ে লিখলে, প্রাইস দিয়ে বা কোন কিছু দিয়ে পোস্ট করলে ১ মিনিটে এরেস্ট করা হবে। সুতারাং কেউ যদি বলে এটা কিনেন এটা বিক্রি করেন এমন করলেই এরেস্ট হবে। সব কিছু তো বিএসইসি করতে পারবে না। তাই আমি বলবো যে যার জায়গা থেকে চেষ্টা করুন। এধরণের গুজব থেকে বিরত থাকুন। এখন একটা টেন্ড হয়ে গেছে। পৃথিবীর যেখানে যা ঘটে সব বিএসইসির ধায়। এখান থেকে সবাইকে বের হয়ে আসতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের সোশ্যাল মিডিয়া আইকনে ক্লিক করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2024 Businessprotidin.com
Site Customized By NewsTech.Com