1. baiozidkhan@gmail.com : admin_bizp :
সুই সুতা দিয়ে ছবি একে চমক দেখিয়েছেন নারী উদ্যোক্তা ইলোরা পারভিন - Business Protidin

সুই সুতা দিয়ে ছবি একে চমক দেখিয়েছেন নারী উদ্যোক্তা ইলোরা পারভিন

  • সর্বশেষ আপডেট : সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪

বাংলাদেশে রং তুলির অনেক চমক আমরা দেখেছি। দেখেছি এস এম সুলতানের শিল্পকর্ম। তবে নতুন এক শিল্পের জন্ম দিয়েছেন বাংলাদেশের এক নারী উদ্যোক্তা। যার শিল্পকর্মে মুগ্ধ হয়েছেন চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান নিজেও। যার আঁকা ছবি পছন্দ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। বলছি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের (এসএমই) সদস্য ও নারী উদ্যোক্তা ইলোরা পারভিনের কথা। যার শিল্প কর্ম ও কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা হয়েছে বিজনেস প্রতিদিনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিজনেস প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার আবরার ফাহাদ।

বিজনেস প্রতিদিন : সুই-সুতা দিয়ে ছবি আঁকায় পথ চলা কেমন ছিল?

ইলোরা পারভীন: বর্তমানে ৩০ বছরের পথচলা আমার সুই-সুতা শিল্পে। যেখানে আমি সুই সুতার সেলাই করা মানুষের পোট্টেট তৈরি করি। পাশা অন্য কাজও করি তবে এই পথ চলা আমার জন্য সহজ ছিল না। ২০ বছর শুধু ঘরে বসে কাজ করেছি এবং গবেষণা করেছি, এরপর এই শিল্পের শিল্পী হয়ে বাহিরে আত্মপ্রকাশ করেছি। ২০ বছর পর ঢাকার ডিগ গ্যালারিতে একটা প্রদর্শনী করি। সেখানে হাসান মাহমুদ নামে একজন শিল্পীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। সব প্রর্দশণী দেখতে এসে চলেন যান। কিন্তু হাসান মাহমুদ প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে প্রদর্শনী দেখলেন, এক পর্যায় তিনি উপরে একটা অনুষ্ঠানে মেহমান ছিলেন সেখানে প্রোগ্রাম শেষ করে আবার আসছেন। আমি খেয়াল করলাম সবাই দেখে চলে যায় কিন্ত এই ভদ্রলোক আবার আসছেন। কিছুক্ষণ দেখে তিনি আমাকে ডেকে বললেন কে এই শিল্পী তিনি এগুলো এঁকেছেন।

তখন পরিচয় হলে তিনি বলেন তোমার কাজ অসাধারণ তুমি সুতা দিয়ে সেটা করেছো আমরা রং দিয়েও সেটা করতে পারি না। তখন তিনি বললেন তোমাকে আমি বরেণ্য চিত্র শিল্পী সাহাবুদ্দিনের কাছে নিয়ে যাবো, যাবা তুমি? তখন আমি বললাম এটা আমার জন্য অনেক বড় একটা পাওয়া অবশ্যই যাবো।

তিনি বললেন আগামী মাসের ২২ তারিখ তিনি বিদেশ থেকে আসবেন, তোমাকে আমি নিয়ে যাবো। আমাকে ফোন দিবা। আমি তার সঙ্গে সাহাবুদ্দিন স্যারের বাসায় গেলাম, সাথে ১০টি ছবি নিয়ে গেছি। আমার ছবিগুলো তিনি প্রায় ৪ ঘণ্টা দেখলেন। সন্ধার দিকে যখন কেয়ারটেকার এসে বাতি জ্বালিয়ে দিলেন তখন তিনি জোরে বলে উঠলেন এবার মজা পাওয়া গেছে। তখন তিনি তার স্যান্ড থেকে তার বানানো কিছু ছবি নিয়ে আমারগুলোর সঙ্গে উচু নিচু করে মিলিয়ে বললেন তোমার ছবি অনেক সুন্দর। তুমি ছবি বিক্রি করা শুরু করে দাও। সত্যি কথা তখনো আমি ছবি বিক্রি করা শুরু করিনি।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ইলোরা পারভিনের আঁকা চিত্র কর্ম।

বিজনেস প্রতিদিন : কত বছর বয়স থেকে সুই-সুতা দিয়ে ছবি আঁকার এই শিল্পে আপনার পথ চলা?

ইলোরা পারভিন: রং তুলি দিয়ে শিল্পীরা যেমন ছবি আঁকেন তেমন সুই-সুতার ব্যবহারে মানুষসহ বিভিন্ন জিনিসের ছবি ফুটিয়ে তোলেন ইলোরা পারভীন। বয়স যখন ৮-১০ বছর তখন নড়াইলের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান সম্পর্কে চাচা হোন তার পাশে বসেই ছবি আঁকা দেখতেন। তার আঁকা ছবির বিভিন্ন কলাকৌশল, যেমন তিনি তার ছবিতে বাঙালি জাতির গৌরবময় দিকগুলো তুলে ধরতেন। সমান কাগজে ছবি আঁকার পর যে উচু-নিচু ঢেউ তুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতেন সেটা নিয়ে আমার কৌতূহল জাগতো, কিভাবে এটা ফুটে উঠে সেই কৌতূহল থেকে আমার সুই-সুতা শিল্পে পথচলা বলে জানান ইলোরা পারভিন।

বিজনেস প্রতিদিন : সুই-সুতা দিয়ে অসাধারণ এই কাজ শিখতে কোথাও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন?

ইলোরা পারভীন: আমি এই কাজ শিখতে কোথাও প্রশিক্ষণ নেইনি। এস এম সুলতান কাকার কাজ দেখে শিখেছি। তিনি যে রং তুলি দিয়ে ছবি  আঁকতেন তা মনোযোগ দিয়ে দেখতাম। ছোটবেলায় আমাদের ছবি আঁকার কোনো প্রচলন ছিল না। সুলতান কাকাকেই দেখতাম ছবি আঁকতে। এখন তো ক্লাস অষ্টম শ্রেণী থেকে ছবি আঁকার প্রচলন আছে। সব ঘরে এখন বাচ্চাদের জন্য রং তুলি আছেই। এই প্রচলনটা আমাদের ছোটবেলায় ছিল না। এস এম সুলতান কাকার ছবি আঁকা দেখেই আমার মনে কৌতূহল জেগেছে এবং সেখান থেকেই ছবি আকার রাস্তায় আসা।

বিজনেস প্রতিদিন : আপনার সুলতান কাকা রং তুলি দিয়ে ছবি আকঁতেন কিন্তু আপনি সুই সুতা দিয়ে আকাঁর আইডিয়া কোথায় পেলেন?

ইলোরা পারভিন: আমাদের মা-খালা বা নানুরা দেখতাম সুই-সুতার অনেক কাজ করতেন। এছাড়া আমাদের যশোর নড়াইলের মা-বোনেরা সেলাই কাজে অনেক ভালো। আমাদের অঞ্চল ভিত্তিক বা আমাদের পারিবারিকভাবে সেলাই কাজে অব্যস্ত। এজন্য ছোটবেলা থেকেই এটা দেখে বড় হয়েছি।

এস এম সুলতান কাকার শিষ্য ছিলেন দুলাল চন্দ শাহ, তাকে বললাম দাদা আপনার ছবিতে এমন উচু-নিচু কিভাবে হয়। তখন তিনি আমাকে বললেন তুমি যে সুতা দিয়ে কাজ করো এটা নিয়ে তোমার অনেক আগ্রহ। তুমি এটা দিয়ে ছবি আঁকা শুরু করো। দেখবে তুমি আস্তে আস্তে শিখতে পারবা। তবে মনে রাখবা এটা কিন্তু রয়ের মত সহজ না। যেহেতু এটা নিয়ে তোমার আগ্রহ বেশি তুমি পারবা। সেখান থেকে আমার সুই-সুতা দিয়ে ছবি আঁকা শুরু।

বিজনেস প্রতিদিন : আপনি একজন এসএমই উদ্যোক্তা, আপনার ব্যবসা প্রসারের জন্য কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা?

ইলোরা পারভিন: আমার কাজ যেহেতু বাংলাদেশে একমাত্র আমি করছি। আর কেউ এটাতে অভ্যস্ত না। সেজন্য অনেকে কাজের মর্মটা বুঝছে না। রং তুলির ছবিতে যেমন তারা আকৃষ্ট হয় সেই তুলনায় সুই-সুতার কাজ এখনো সবাই উপলদ্ধি করতে পারছে না। অনেককে বলার পরে সে হাত দিয়ে ঘঁসে দেখে আসলেই সুতার কিনা।

এসএমইর বিভিন্ন মেলার মাধ্যমে আমার এই কাজগুলো প্রচার করছি। এসএমইর প্রতিটি সদস্যর সাথে আমার ভালো পরিচয়। তাদেরকে আমি বলেছি যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই প্রচারটা বাড়ানো যায় কিনা? এসএমই ফাউন্ডেশন বাণিজ্য মেলায় আমার ছবি নিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ছবি দেখেছেন এবং আমার কাজ অনেক পছন্দ করেছেন। বাংলাদেশে যেহেতু এসএমই ফাউন্ডেশন অনেক বড় প্রতিষ্ঠান এবং মিডিয়ার মাধ্যমে আমার এই কাজকে প্রচার করার অনুরোধ করবো। যেহেতু এই কাজ আমি করি আর কেউ করছে না। আর কাজটা যেহেতু আমি পারি সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেশে বা দেশের বাইরেও যদি এই কাজের প্রচার করে আমার জন্য কাজ করতে উৎসাহ যোগাতো। আমার অনুপস্থিতিতে যেন এই কাজটা ঠিকঠাকভাবে থাকে।

বিজনেস প্রতিদিন : আপনার এই কাজ পরবর্তী প্রজন্মকে শিখিয়ে যেতে চান কিনা?

ইলোরা পারভিন: আমি এসএসই ফাউন্ডেশনকে বলেছি। আমার এই কাজ অন্যদের শিখাতে যদি কোনো প্রশিক্ষণের আয়োজন করার কথা বলেছি। তারা যদি এই ব্যবস্থা করে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো মানুষকে শিখিয়ে এই শিল্পে আগ্রহী করে তুলতে। যাতে করে এই শিল্পের প্রসার বাড়ে। অনেক তরুণ ছেলে মেয়েরা অনেক সময় আগ্রহ দেখায় কিন্তু এর ভিতরে প্রবেশ করলে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কারণ এতে অনেক ধৈর্য এবং সময়ের প্রয়োজন হয়।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের সোশ্যাল মিডিয়া আইকনে ক্লিক করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2024 Businessprotidin.com
Site Customized By NewsTech.Com