1. baiozidkhan@gmail.com : admin_bizp :
সোনালী লাইফে ৩৫৩ কোটি টাকা অনিয়মের তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ - Business Protidin
শিরোনাম :
প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফের উন্নয়ন সভা অনুষ্ঠিত দেশে সরকারি ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের’ কার্যক্রম শুরু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ‘ক্ষুদ্র ঋণ ব্যাংক’ গঠনের উদ্যাগ সরকারের পঞ্চমবারের মতো সাউথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন সোনালী লাইফের বেতন কমছে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ কর্মীদের ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডি হতে লাগবে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা লাভেলো আইসক্রিমের এমডির পরিবারসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠান টিকে থাকা ও সফলতার মৌলিক ভিত্তি: আমির খসরু দারিদ্র্যসীমার নিচে যাওয়ার ঝুঁকিতে দেশের ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ: বিশ্বব্যাংক ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে কঠোর নির্দেশনা জারি

সোনালী লাইফে ৩৫৩ কোটি টাকা অনিয়মের তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ

  • সর্বশেষ আপডেট : রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতি, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তহবিল থেকে তছরুপ হয়েছে ৩৫৩ কোটি টাকা। কোম্পানিটির বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও পেটি ক্যাশ থেকে এসব অর্থ তছরুপ করা হয়েছে। আবার জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী লাইফের টাকাতেই সোনালী লাইফের শেয়ারের মালিক হয়েছেন ১০ পরিচালক।

এমন তথ্য উঠে এসেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)’র পরিদর্শন প্রতিবেদনে।

এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর সোনালী লাইফের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করতে অডিট ফার্ম হুদাভাসী চৌধুরী এন্ড কোং-কে নিরীক্ষক নিয়োগ দেয় বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওই তদন্তে সোনালী লাইফের ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৬ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ উঠে আসে।

এই প্রেক্ষিতে গত ২১ এপ্রিল থেকে সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ ৬ মাসের জন্য সাসপেন্ড করে প্রশাসক নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। তবে বীমা কোম্পানিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসককে তদন্ত কাজে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ ওঠে।

সর্বশেষ গত ২০ আগস্ট তারা আইডিআরএ কার্যালয় দিনভর অবরুদ্ধ করে রাখে এবং পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে রাত ১টায় দুই শর্তে সমঝোতা হয়।

পরবর্তীতে সমঝোতার শর্ত অনুসারে সোনালী লাইফের প্রশাসক প্রত্যাহার ও পরিচালনা পর্ষদ পুনর্বহালের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং গত ৫ সেপ্টেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে কোম্পানিটিতে অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠন করে আইডিআরএ।

এরইমধ্যে সোনালী লাইফের তহবিল তছরুপের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইডিআরএ’কে চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ। এ বিষয়ে গৃহীত ব্যবস্থার অগ্রগতি সম্পর্কেও সংস্থাটিকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।

বিএফআইইউ’র যুগ্মপরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি গত ২২ সেপ্টেম্বর আইডিআরএ’কে পাঠানো হয়।

সোনালী লাইফের ভাউচার, ইআরপি সফটওয়্যারের তথ্য, ব্যাংকসমূহ, ফাইন্যান্স কোম্পানিসমূহ, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান, সিকিউরিটিজ হাউজ ও গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান (ব্যাংকের মাধ্যমে) থেকে সংগৃহীত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে তহবিল তছরুপ সংক্রান্ত এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ।

বিএফআইইউ’র প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, সোনালী লাইফের ৩৫৩ কোটি টাকা তছরুপের সাথে জড়িত রয়েছেন কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ ৮ পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী ও অপর দুই কর্মকর্তা। এ ছাড়াও কোম্পানিটির ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহীর এক ভাই ও ফুপুর নাম উঠে এসেছে তহবিল তছরুপে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকায়।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস নিয়েছেন ১৮৪ কোটি টাকা:

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস নিয়মবহির্ভতভাবে সোনালী লাইফের তহবিল থেকে নিয়েছেন ১৮৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভবন বিক্রির নামে নিয়েছেন ১৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। বাকী ৪৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা তিনি নিয়েছে নিজের নামে ও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে।

এই টাকা তিনি নেন ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালে। সোনালী লাইফের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও পেটিক্যাশ থেকে এসব অর্থ নিয়েছেন বলে বিএফআইইউ’র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

বিএফআইইউ’র তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভবন বিক্রির নামে ১৩৯.১০ কোটি টাকা নিলেও এই ভবন ক্রয়ের বিষয়ে সোনালী লাইফের বোর্ডসভার কোন অনুমোদন নেই। অনুমোদন নেই বীমা খাত নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র। এ ছাড়াও ভবনটি ৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে যমুনা ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখায় বন্ধক রাখা।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ভবন বিক্রির নামে নেয়া এই ১৩৯.১০ কোটি টাকা থেকে জনতা ব্যাংকে সিডি এক্রিলিক বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ২৭ কোটি টাকা। আর ড্রাগন সোয়েটারের ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ২৩ কোটি টাকা।

বাকী টাকা তিনি তার মালিকানাধীন যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে নিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে- ড্রাগন সোয়েটার্স বাংলাদেশ, ড্রাগন সোয়েটার্স এন্ড স্পিনিং, ড্রাগন ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড কমিউনিকেশনস, সিডি এক্রিলিক বাংলাদেশ এবং ইম্পেরিয়াল সুয়েটার্স বাংলাদেশ।

বিএফআইইউ বলছে, প্রতিবেদনটি প্রস্তুতের সময় মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মতামত নেয়া হয়েছে। মতামতে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস জানিয়েছেন, তিনি ১৩৯.১০ কোটি টাকা তিনি নিয়েছেন ইম্পেরিয়াল ভবনের ভাড়া বাবদ। তবে এর সপক্ষে তিনি কোন দলিলাদি দেখাতে পারেননি।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, সোনালী লাইফের ইআরপি সফটওয়্যার ও কোম্পানিটির বিভিন্ন ভাউচারের তথ্য অনুসারে ইম্পেরিয়াল ভবনের ভাড়া বাবদ ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৮.১৭ কোটি টাকা নেয়ার প্রমাণ পেয়েছে বিএফআইইউ। তবে বিএফআইইউ বলছে, পর্যাপ্ত দলিলাদি না পাওয়ায় মোস্তফা গোলাম কুদ্দস ভবনের ভাড়া বাবদ কত টাকা নিয়েছেন তা তারা নিশ্চিত হতে পারেনি।

সোনালী লাইফের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে নগদে উত্তোলন ১৬৯ কোটি টাকা:

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সোনালী লাইফের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে নগদে উত্তোলন করা হয়েছে ১৬৯ কোটি ৯ লাখ টাকা।

একক চেকের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদে উত্তোলন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ২৬ জুন কোম্পানিটির এসবিএসি ব্যাংক থেকে একক চেকে এই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

এই বিশাল অংকের টাকা নগদে উত্তোলন করায় তা তহবিল তছরুপের ইঙ্গিত বহন করে বলে মন্তব্য করা হয়েছে বিএফআইইউ’র তদন্ত প্রতিবেদনে।

রূপালি ইন্স্যুরেন্সকে দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা:

২০১৯, ২০২০ ও ২০২২ সালে রূপালি ইন্স্যুরেন্সকে দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ৬টি ধাপে এসব টাকা দেয়া হয়েছে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিটিকে। তবে এ অর্থের প্রকৃত সুবিধাভোগী বলা হয়েছে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসকে।

ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী মীর রাশেদ বিন আমানের অনিয়ম:

বিএফআইইউএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সাল এই ৪ বছরে রাশেদ বিন আমান তার বেতনের বাইরে ৪ কোটি ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন সোনালী লাইফ থেকে। সোনালী লাইফের হিসাব থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে এই টাকা নগদে তুলেছেন রাশেদ। তবে এই টাকা রাশেদ তছরুপ বা আত্মসাৎ করেছে কিনা এমন কোনো মতামত দেয়া হয়নি প্রতিবেদনে।

বিএফআইইউএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে রাশেদ ৩টি বিলাশবহুল গাড়ি কিনেছেন। এই গাড়িগুলোর মোট মূল্য ৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে মার্সিডিজবেঞ্চ ই২০০কোপ ব্রান্ডের একাটি গাড়ি কিনেছেন ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকায়, মার্সিডিজ বেঞ্চ জিএলই৫৩ গাড়িটি কিনেছেন ২ কোটি ২০ লাখ টাকায় এবং সাড়ে ৩ কোটি টাকায় একটি ব্রান্ড নিউ পোস গাড়ি ক্রয় করেন।

এসব গাড়ির মূল পরিশোধ করা হয়েছে ঋণ নিয়ে এবং রাশেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্ট থেকে।

বিএফআইইউ প্রতিবেদনে বলছে, গাড়ির মূল্য ও গাড়ি বিপরীতে নেয়া ঋণের টাকা রাশেদ সোনালী লাইফ থেকে বিধিসম্মতভাবে নিয়েছে কিনা পরিদর্শন চলাকালে পরিদর্শন দলকে তা নিশ্চিত করতে পারেনি সোনালী লাইফ।

এছাড়াও গাড়ির বিপরীতে নেয়ার ঋণের কিস্তির টাকা সোনালী লাইফের একাউন্ট থেকে পেটি ক্যাশের মাধ্যমে নগদে গ্রহণ করে ঋণের কিস্তিু পরিশোধ করা হয়ে থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিএফআইইউ’র প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, গুলশানে বিল্ডিং টেকনোলজি এন্ড আইডিয়াস থেকে মীর রাশেদ বিন আমান ও ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার নামে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা মূল্যের একটি এপার্টমেন্ট বুকিং দেয়া হয়। এই এপার্টমেন্টের মূল্য বাবদ ১৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয় ন্যাশনাল হাউজিং ফাইনান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট থেকে ঋণ নিয়ে।

বাকী ৫.৩৯ কোটি টাকা পরিশোধ করেন রাশেদ ও ফৌজিয়া। আর ঋণের ১৩ কোটি টাকার মধ্যে ৩.০২ লাখ টাকাও পরিশোধ করেন তারা।

বিটিআই’কে সরাসরি পরিশোধ করা ৫ কোটি টাকার মধ্যে আড়াই কোটি টাকা পরিশোধ করা হয় রাশেদের ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে। যার মধ্যে ১.৫০ কোটি টাকা ২০২০ সালে ও ১ কোটি টাকা ২০২২ সালে পরিশোধ করা হয়। ২০২০ সালে পরিশোধ করা ১.৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৫০ লাখ টাকা রাশেদ সোনালী লাইফ থেকে নিয়েছেন বলে মনে করছে বিএফআইইউ।

বাকী ২.৫৪ কোটি টাকা ২০২২ সালের ২৬ জুন  ও ৫ জুলাই ২টি পে-অর্ডারে জমা করা হয় বিটিআই এর একাউন্টে। এই পে-অর্ডার ২টি করা হয় সোনালী লাইফের একাউন্ট থেকে। ২টি পে-অর্ডারেরই ফরওয়ার্র্ডিং লেটারে স্বাক্ষর করেন সোনালী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান নূর-ই-হাফজা ও  ফৌজিয়া কামরুণ তানিয়া।

ন্যাশনাল হাউজিং থেকে নেয়া ঋণের ১৩ কোটি টাকার মধ্যে ২০২২ সালে ১০ আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে রাশেদ ও তানিয়ার মিউচুয়াল ট্রান্ট ব্যাংকের যৌথ একাউন্ট থেকে। রাশেদ ও তানিয়ার যৌথ ওই একাউন্টটিতে অধিকাংশ টাকাই জমা হয়েছে নগদে। বিএফআইইউ মনে করছে, সোনালী লাইফের পেটি ক্যাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে রাশেদ ও তানিয়া যৌথ একাউন্টটিতে জমা করে থাকতে পারে।

বিএফআইইউ’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ২ দফায় পেটিক্যাশ হতে ডেভেলপমেন্ট ইনসেনটিভ বাবদ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ১.৩৪ কোটি টাকা ও ১.৫৫ কোটি টাকা (মোট ২.৮৯ কোটি টাকা) অনুমোদনবিহীনভাবে গ্রহণ করেছেন। তবে এই টাকা রাশেদ তছরুপ করেছে কিনা এমন কোনো মতামত দেয়নি বিএফআইইউ।

সোনালী লাইফের টাকায় জালিয়াতি করে শেয়ারের মালিক হয়েছেন ১০ পরিচালক:

বিএফআইইউ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে সোনালী লাইফের পরিশোধিত মূলধন ১৮ কোটি টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৮ কোটি টাকা করার অনুমোদন দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

উদ্যোক্তা পরিচালকদের এই টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও তা না করে সোনালী লাইফের সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের এসওডি একাউন্ট থেকে ৮.৯৫ কোটি টাকা ও ১.৫৫ কোটি টাকা নগদে উত্তোলন করে ১০ জন পরিচালকের নামে শেয়ারের মূল্য পরিশোধ বাবদ পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়। এসব পে-অর্ডার করা হয় ২৬ জুন ২০১৮ সালে। ওই দিনই উক্ত পে-অর্ডারগুলো সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এবং কমার্স ব্যাংকে সোনালী লাইফের নামে খোলা এসএনডি একাউন্টে জমা করা হয়। এসএনডি একাউন্ট নম্বর- ০০০২১৩০০০০৭৭২। পরে আবার এই একাউন্ট থেকে ওই দিনই অপর একটি এসএনডি একাউন্ট (নং ০০০২১৩০০০০৩৩৪)-এ ১.৩৭ কোটি টাকা এবং ২ জুলাই ২০১৮ তারিখে ৯.১৩ কোটি টাকা জমা করা হয়।

বিএফআইইউ তাদের প্রতিবেদনে বলছে, মূলত সোনালী লাইফের অর্থ দিয়েই ১০ জন পরিচালক কোম্পানিটির মূলধন বৃদ্ধিজনিত শেয়ার ক্রয় করেছেন, যা জালিয়াতি।

গ্যালাক্সি হলিডেজ এর মাধ্যমে ৩৭.৬৪ কোটি টাকা পাচার:

বিএফআইইউ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যালাক্সি হলিডেজ লিমিটেডকে বিভিন্ন দেশে ট্যুর, সেমিনার, ওমরা পালন ও অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা দেখার নামে ৩৭.৬৪ কোটি টাকা প্রদান করেছে সোনালী লাইফ। তবে উক্ত লেনদেনের ভাউচার ব্যতিত কোন প্রকার সহায়ক দলিলাদি প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা হিসাব বিভাগের নিকট রক্ষিত নেই মর্মে পরিদর্শন দলকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবহিত করেন।

বিএফআইইউ মনে করছে, এই টাকা গ্যালাক্সি হলিডেজ এর মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়ে থাকতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমানের ওপরই এর দায়ভার বর্তায়।

ক্রাউন মানি চেঞ্জারের মাধ্যমে পাচার ৬.৪৬ কোটি টাকা:

ক্রাউন মানি চেঞ্জার কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন সময় সোনালী লাইফের ৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে মনে করছে বিএফআইইউ। এসব টাকা দেয়া হয়েছে বীমা কোম্পানিটির পেটিক্যাশ ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে নগদে উত্তোলন করে। হুন্ডি অথবা বাহকের মাধ্যমে এই টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, পাউন্ড ক্রয়, লন্ডনে অর্থ প্রেরণ, লন্ডনে শপিং, দুবাই ট্যুর, লন্ডন কার্ড, সফটওয়্যার ক্রয় পারপাস, পরিচালক সফিয়া সোবহান চৌধুরী ও মোস্তফা কামরুস সোবহানের কন্যা মাহেরাকে প্রদান, মুখ্য নির্বাহী রাশেদের মেডিকেল ব্যয়সহ অন্যান্য বাবদে এসব টাকা দেয়া হয়েছে ক্রাউন মানি চেঞ্জার কোম্পানিকে।

শেয়ার ক্রয়ের নামে সোনালী লাইফের ৭.০৬ কোটি টাকা স্থানান্তর:

বিএফআইইউ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনালী লাইফের হিসাব থেকে ৭.০৬ কোটি টাকা স্থানান্তর করে শেয়ার ক্রয় করা হয়। এসব শেয়ার কেনা হয়েছে সাবেক মুখ্য নির্বাহী মীর রাশেদ বিন আমানের আত্মীয়-স্বজনসহ সোনালী লাইফের বিভিন্ন কর্মকর্তা, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে। কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে এসব ব্যক্তির নামে খোলা বিভিন্ন বিও হিসাবে শেয়ার ক্রয় বাবদ এই টাকা স্থানান্তর করা হয়।

পরিচালক ও পরিচালকদের আত্মীয়-স্বজনরা আর্থিক সুবিধা নেন প্রায় ২ কোটি টাকার:

সোনালী লাইফের তহবিল থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রায় ২ কোটি টাকার আর্থিক সুবিধা নেন সাবেক চেয়ারম্যান নূর-ই-হাফজাসহ মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান নূর-ই-হাফসার অনিয়ম ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ভাইস চেয়ারম্যান ফৌজিয়া কামরুন তনিয়ার আত্মসাৎ ১১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। তাসনিয়া কামরুন আনিকার আত্মসাৎ ১১ লাখ ১২ হাজার টাকা। অবৈধভাবে শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল নিয়েছেন ৩০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। মোস্তফা কামরুস সোবহানের আত্মসাৎ ৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা। ভ্রমণ ও বৈদেশিক মুদ্র ক্রয়ে মোস্তফা কামরুস সোবহানের মেয়েকে দেয়া হয় ২৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের সোশ্যাল মিডিয়া আইকনে ক্লিক করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2025 Businessprotidin.com
Site Customized By NewsTech.Com