নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমা আইন, ২০১০-এ বড় ধরনের সংশোধনী আনা হচ্ছে। ১৫ বছর পুরোনো এই আইনকে আধুনিক করা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) আরও শক্তিশালী করতেই সংশোধনের এই উদ্যোগ। সংশোধিত এই আইনের মূল লক্ষ্য হলো বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন, পারিবারিক প্রভাব কমানো এবং অনিয়ম রোধে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা।
জানা গেছে, সংশোধনের মাধ্যমে বীমা খাতের ওপর নিয়ন্ত্রক সংস্থার ক্ষমতা বাড়ানো হবে, যা বর্তমান আইনে সম্ভব নয়।
খসড়া আইনটি শিগগিরই আইডিআরএ-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে, যাতে সাধারণ মানুষ এবং খাতসংশ্লিষ্টরা মতামত জানাতে পারেন।
প্রস্তাবিত সংশোধনীর মূল দিক-
পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা : গ্রাহকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হলে আইডিআরএ কোনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে পারবে। তবে দুই বছরের মধ্যে নতুন পর্ষদ গঠন করতে হবে।
পারিবারিক প্রভাব কমানো : কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা পরিবার সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কোনো বীমা কোম্পানির ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক হতে পারবে না।
তল্লাশি ও সম্পত্তি জব্দের ক্ষমতা : নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা কোম্পানির অফিসে প্রবেশ করে তল্লাশি চালাতে, নথি জব্দ করতে এবং পুলিশের সহায়তা নিতে পারবে। প্রয়োজনে দাবি পরিশোধের জন্য কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রি করার ক্ষমতাও পাবে।
মূলধন ঘাটতিতে শাস্তি : নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মূলধন ঘাটতি পূরণ না করলে নতুন পলিসি বিক্রি বা প্রিমিয়াম সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা দণ্ডের বিধান রাখা হচ্ছে।
ঋণ নিষিদ্ধ : পরিচালক, শেয়ারহোল্ডার বা তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বীমা কোম্পানির সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।
যোগ্যতা ও মেয়াদ নির্ধারণ : কোম্পানির পরিচালক বা চেয়ারম্যান হতে হলে ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায়িক বা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। একইসঙ্গে পরিচালকের টানা মেয়াদ সর্বোচ্চ ছয় বছর নির্ধারণ করা হচ্ছে।
কঠোর শাস্তির বিধান : অনিয়মের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হচ্ছে। যেখানে বর্তমানে সর্বনিম্ন শাস্তি মাত্র ৫ লাখ টাকা জরিমানা।
বীমা এজেন্ট কমিশন হ্রাস : প্রথম বছরের প্রিমিয়ামের ওপর কমিশন ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হবে। পরবর্তী বছরগুলোতে এটি ৫ শতাংশ নির্ধারিত থাকবে।
আইডিআরএ সূত্র জানায়, ব্যাংক খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের যেভাবে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, বীমা খাতে তাদের সেই ক্ষমতা নেই। তাই এই আইন সংশোধন না করলে বীমা খাতের চলমান সংকট নিরসন কঠিন হবে।
বীমা খাতে অনিয়মের চিত্র-
২০২৪ সালে বীমা দাবি নিষ্পত্তির হার ছিল মাত্র ৫৭ শতাংশ। অর্থাৎ, মোট ১৬ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকার দাবির বিপরীতে গ্রাহকেরা পেয়েছেন মাত্র ৯ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে, চলতি বছরের মার্চে ছয়টি বীমা কোম্পানিকে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে নির্দেশ দেয় আইডিআরএ।
বর্তমানে দেশে ৮২টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬টি জীবন বীমা এবং ৪৬টি সাধারণ বীমা কোম্পানি। গত ১৪ বছরে ২৬ লাখেরও বেশি বীমা পলিসি বাতিল হয়েছে, যা বীমা খাতের দুর্বল ব্যবস্থাপনার একটি পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরে।
Leave a Reply