নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিএসইসি ভবন ঘেরাও করার ঘোষণা দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমআইএ)।
সংগঠনটির প্রধান মুখপাত্র মো. নূরুল ইসলাম মানিক গণমাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ পুরো কমিশনের পদত্যাগ দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের সাথে সংহতি জানিয়ে বিএসইসি ভবন ঘেরাও করার ঘোষণা দেয় বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বিসিএমআইএ।
এর আগে, বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ৪ দফা দাবি জানিয়ে এসব দাবি না মানলে পদত্যাগের আন্দোলন শুরু করে। এক পর্যায়ের কমিশনের চতুর্থ ফ্লোরে চেয়্যারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করা হয়। এসময় দুপুর ১টা থেকে রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবিতে সর্বস্তরের কর্মকর্তারা বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছেন। বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে কমিশনে ব্লাক আউট করা হয়। বেলা ২টার দিকে সেনাবাহিনীরা সদস্যরা কমিশন ভবনে প্রবেশ করে। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিএসইসি কর্মকর্তাদের লঠিপেটা করে। ফলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পরে সাড়ে তিনটার দিকে অবরুদ্ধ শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্ধার করে সেনাবাহিনী।
সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসি নির্বাহি পরিচালক সাইফুর রহমানকে বিতর্কিতভাবে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছে রাশেদ মাকসুদ কমিশন। একইভাবে আরও কয়েকজনকে এই অবসর দেওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। যা নিয়ে বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভিতরে তৈরী হয়েছে চরম ক্ষোভ।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিএসইসি ভবন ঘেরাও করা হবে জানিয়েছেন বিসিএমআইএ’র প্রধান মুখপাত্র মো. নূরুল ইসলাম মানিক বলেন, বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই বর্তমান চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চাচ্ছেন। এর আগেও আমরা রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ চেয়ে আসছি। আমাদের এই চাওয়া যে সঠিক তা আজ কমিশনের ভিতরের কর্মকর্তারা প্রমাণ করে দিলো। এই চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সমস্যা আছে। ওনাকে দিয়ে বিএসইসি চলবে না। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের পুঁজিবাজার চালাতে গেলে বর্তমান চেয়ারম্যানকে সরিয়ে যোগ্য লোক এই চেয়ারে বসাতে হবে। সকল বিনিয়োগকারীদের আগামীকাল বিএসইসি ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অন্যান্য খাতের সংস্কারের সঙ্গে শেয়ারবাজারের নেতৃত্বেও পরিবর্তন আনা হয়। কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তিনি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর পরিবর্তে হতাশা বাড়িয়েছেন। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পতনের বৃত্তে আটকে আছে শেয়ারবাজার। প্রতিনিয়ত পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বহু বার প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। রাশেদ কমিশনে আস্থা না পেয়ে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কার্যালয়ের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় বিনিয়োগকারীরা। তবুও কোনো প্রতিকার ও সুফল পায়নি সাধারণ বিনিয়োগকারী। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল পুরাতন ডিএসই ভবনের সামনে মহাসমাবেশ করে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা।
Leave a Reply