1. baiozidkhan@gmail.com : admin_bizp :
স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন হলে সার্কে বাণিজ্য বাড়বে: বাংলাদেশ ব্যাংক - Business Protidin
শিরোনাম :
প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফের উন্নয়ন সভা অনুষ্ঠিত দেশে সরকারি ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের’ কার্যক্রম শুরু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ‘ক্ষুদ্র ঋণ ব্যাংক’ গঠনের উদ্যাগ সরকারের পঞ্চমবারের মতো সাউথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন সোনালী লাইফের বেতন কমছে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ কর্মীদের ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডি হতে লাগবে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা লাভেলো আইসক্রিমের এমডির পরিবারসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠান টিকে থাকা ও সফলতার মৌলিক ভিত্তি: আমির খসরু দারিদ্র্যসীমার নিচে যাওয়ার ঝুঁকিতে দেশের ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ: বিশ্বব্যাংক ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে কঠোর নির্দেশনা জারি

স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন হলে সার্কে বাণিজ্য বাড়বে: বাংলাদেশ ব্যাংক

  • সর্বশেষ আপডেট : মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক: দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য তাদের মোট বাণিজ্যের তুলনায় খুবই নগণ্য। এই দেশগুলোর মোট বাণিজ্যের মাত্র ৫ শতাংশ হয় নিজেদের মধ্যে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য হলে এই অঞ্চলের দেশগুলোর আন্তবাণিজ্য বাড়বে। স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করতে হলে অবশ্য বেশ কিছু সংস্কার করতে হবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে। এতে আমদানিনির্ভর দেশগুলো বিপাকে পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত কমে যাওয়ায় বাংলাদেশকেও আমদানি সীমিত করতে হয়েছে। এই বাস্তবতায় স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য শুরুর ধারণা গতি পেয়েছে। ভারতের সঙ্গে তাদের মুদ্রা রুপিতে বাণিজ্য করার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ, যদিও এ উদ্যোগ এখনো সফল হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সার্ক অঞ্চলের দেশগুলোর ভৌগোলিক নৈকট্য থাকলেও তাদের বাণিজ্যনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এত ভিন্নতা রয়েছে যে সেগুলোই পরস্পরের সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনৈতিকভাবে এই দেশগুলো পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্যের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কাটাতেই এমন উদ্যোগ। ডলারের সঙ্গে এসব দেশের মুদ্রার বিনিময় হারের ক্ষেত্রে যে অস্থিরতা আছে, তা নিরসনে এমন উদ্যোগ কাজে আসতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ১৯০ কোটি। এই দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপির আকার ৪ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার (এক ট্রিলিয়নে এক লাখ কোটি)। এর মধ্যে ভারতের হিস্যা সর্বাধিক; তাদের পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মূল্যস্ফীতির হার এক নয়। এখন বাংলাদেশে দুই অঙ্কের কাছাকাছি, পাকিস্তানে দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে মূল্যস্ফীতি, যা ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় অনেকটাই কম। তবে সব দেশেই অর্থনৈতিক সমস্যা আছে, তারপরও মূল্যস্ফীতির হারে ভিন্নতা লক্ষণীয়। সাক্ষরতার হারেও ভিন্নতা লক্ষণীয়। যেমন শ্রীলঙ্কার সাক্ষরতার হার যেখানে ৯০ শতাংশের ওপরে, সেখানে আফগানিস্তানে তা ৪০ শতাংশের নিচে।

স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করার নানা সুবিধা আছে। কিন্তু মুদ্রার গ্রহণযোগ্যতাসহ নানাবিধ কারণে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে হয়েছে। বলা হয়, মুদ্রার সীমিত রূপান্তরযোগ্যতা, বিধিবিধান ও নিয়মতান্ত্রিক বিধিনিষেধ এবং বাজারের গ্রহণযোগ্যতা–সংক্রান্ত বাধা বিদ্যমান। সব মুদ্রাই যে বিনা বাধায় রূপান্তরযোগ্য, বিষয়টি মোটেও সে রকম নয়; সেই সঙ্গে মুদ্রার বিনিময় হারের ওঠানামাও এ ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে ওঠে। বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও বাণিজ্য অর্থায়নে বিধিনিষেধের কারণে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্থানীয় মুদ্রার সীমিত গ্রহণযোগ্যতা আরেক সমস্যা। সবচেয়ে বড় কথা, বাণিজ্য অংশীদারেরা সাধারণত এমন মুদ্রায় বাণিজ্য করায় আগ্রহী, যেটির গ্রহণযোগ্যতা বেশি। ধরা যাক, শ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশ কিছু পণ্য কিনবে; তারা সেই পণ্যের দাম বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার পরিবর্তে বহুল ব্যবহৃত মার্কিন ডলারে নিতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ রাখার ক্ষেত্রেও দেখা যায়, দেশগুলো সাধারণত সহজে ব্যবহারযোগ্য মুদ্রায় তা রাখতে চায়। অপ্রচলিত মুদ্রায় রিজার্ভ রাখা সমীচীন বোধ করে না কোনো দেশ।

এই বাস্তবতায় স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেমন মুদ্রার শক্তি বৃদ্ধি। দেশগুলোর উচিত হবে, বিনিময় হার নির্ধারণের পদ্ধতি উদার করা এবং মুদ্রা রূপান্তরের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ হ্রাস করা। এতে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হার বাড়বে।

দ্বিতীয়ত, স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্যের লক্ষ্যে শক্তিশালী আর্থিক অবকাঠামো গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য তারা অর্থ পরিশোধের পদ্ধতি, ক্লিয়ারিং প্রক্রিয়া ও লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা জোরদারের পরামর্শ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক অংশীদারদের মধ্যে নিয়মকানুনের অভিন্নতা থাকবে। ফলে এই প্রক্রিয়া সহজ হবে।

তৃতীয়ত, যথাযথ মুদ্রা ও রাজস্বনীতি প্রণয়ন করা জরুরি বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া অংশীদার দেশ, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ও আত্মবিশ্বাস তৈরি করা জরুরি বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

চতুর্থত, যথাযথ ও সহযোগিতামূলক আইনি কাঠামো তৈরি করা দরকার বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ সরকারকে এমন নীতি প্রণয়ন করতে হবে, যাতে মুদ্রার রূপান্তরযোগ্যতা বৃদ্ধিসহ স্থানীয় মুদ্রায় আর্থিক নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে, সেগুলো দূর করা যায়। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে।

বিষয়টি হলো, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এককভাবে মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে অনেক দেশ। এই ধারণা ও প্রক্রিয়া জোর গতি পেয়েছে মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ার কারণে। বাংলাদেশও এই প্রক্রিয়ার বাইরে নয়; ইতিমধ্যে ভারতের সঙ্গে রুপিতে এবং চীনের সঙ্গে ইউয়ানে বাণিজ্য শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। তা সত্ত্বেও বিশ্ববাণিজ্যের বড় অংশ এখনো ডলারে হচ্ছে।

বৈশ্বিক রপ্তানির ৮০ শতাংশ এখনো ডলারেই হয়, যা ২০০১ সালে ছিল ৮৯ দশমিক ১ শতাংশ। একই সঙ্গে পাউন্ড, ইউরো, ইয়েন ও অস্ট্রেলীয় ডলারের মতো মুদ্রাগুলোর ব্যবহার কমছে। তবে বাড়ছে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের ব্যবহার। বিশ্বের ৪১টি দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ইউয়ান ব্যবহারের লক্ষ্যে চুক্তি করেছে দেশটি; এই বাণিজ্যের পরিমাণ ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ৫০ হাজার কোটি ইউয়ান। ভারতও ২২টি দেশের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য করছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ববাণিজ্য ও রাজনীতিতে ডলারকে যেভাবে হাতিয়ার হিসেবে সবার বিরুদ্ধে ব্যবহার করে, তার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন দেশ নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য বৃদ্ধির চেষ্টা করছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সার্ক অঞ্চলে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আঞ্চলিক সহযোগিতার দ্বার আরও উন্মুক্ত করতে হবে। নিজেদের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যনীতিতে সামঞ্জস্য দরকার। শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা গড়ে তোলা গেলে সার্ক অঞ্চলের বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের সোশ্যাল মিডিয়া আইকনে ক্লিক করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2025 Businessprotidin.com
Site Customized By NewsTech.Com