নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংক খাত ধ্বংসকারী সবচেয়ে আলোচিত এস আলম গ্রুপের হাত ধরেই ধ্বংসের পথে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। কোম্পানিটির ব্যবসায় মন্দা ও ধারাবাহিকভাবে চলতি আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। অন্যদিকে জীবন বীমা তহবিল বড় পরিসরে ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে সংকটের মুখে।
এছাড়া কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে নানা অসঙ্গতি খুঁজে পাওয়া গেছে। যে কারণে কোম্পানির ভবিষ্যৎ ব্যবসা পরিচালনার সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক পিনাকি অ্যান্ড কোম্পানি, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস।
নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষায় এমন মতামত দিয়েছে।
নিরীক্ষক জানিয়েছেন, বীমা কোম্পানিটির জীবন বীমা তহবিল ২০২৩ সালে ডিসেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ২৫৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এ কোম্পানিটির আলোচিত হিসাব বছরে পরিচালন নগদ প্রবাহ হয়েছে ঋণাত্মক ১৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এই দুই ঋণাত্মক হিসাব কোম্পানিটির ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনা করার সক্ষমতাকে শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
এদিকে পদ্মা ইসলামী লাইফের বীমা দাবি ডিসেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ২২৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। যা বীমা আইন ২০১০ এর ৭২ ধারা অনুযায়ি ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ওই বীমা দাবির বিপরীতে কোন সুদজনিত সঞ্চিতিও গঠন করেনি। কোম্পানির আর্থিক হিসাবে দেখানো ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকার সাদাকা ফান্ডের (পদ্মা ওয়েলফেয়ার ফান্ড) বিষয়ে প্রমাণাদির অভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি নিরীক্ষক।
ব্যাংক স্টেটমেন্টের অভাবে ব্যাংকে দেখানো ৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার নগদ হিসাবও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া ভাড়া নিয়ে চুক্তির অভাবে কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে দেখানো ভাড়াবাবদ ৩ কোটি ৪ লাখ টাকা আয় এবং ভাড়াবাবদ পাওনা ৯ লাখ টাকার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি নিরীক্ষক।
নিরীক্ষক জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আিইএএস)-১২ অনুযায়ি, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে বিলম্বিত করও গণনা করা হয় না।
এদিকে সর্বশেষ প্রকাশিত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি ২০২৪ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়রি-জুন) কোম্পানিটির মোট আয় হয়েছে ১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বিপরীতে আলোচিত সময়ে কোম্পানির ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অথাৎ আলোচিত সময়ের আয়ের তুলনায় কোম্পানির ব্যয় ১১ কোটি টাকা বেশি হয়েছে। যার ভিত্তিতে কোম্পানির জীবন বীমা তহবিল আরো ঋণত্মক হয়েছে। গত ৩০ জুন শেষে তহবিলের মোট আকার দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ২৭১ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া পদ্মা ইসলামী লাইফের অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। বিপরীতে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৩ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার। এরমধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ৩১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং বাকি ৫০ দশমিক ৯১ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারদর গত এক বছরে ১৭ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৪১ টাকা ২০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করেছে। গতকাল লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা ৮০ পয়সায়।
Leave a Reply