* নানান হয়রানিতে ক্ষতিগ্রস্ত ইসলামি ইন্স্যুরেন্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা; * প্রাপ্য কমিশন দেওয়া হতো পছন্দের লোকদের; * অন্যায়ভাবে কর্মচারি ছাঁটাই ও কথায় কথায় খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ; * শ্রম, বিমা ও সরকারি আইন অমান্য করে অফিসে কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি; * কোম্পানি পরিচালনার জন্য সবধরনের আইন অমান্য করে অবৈধ কাজে উৎসাহ; * পূর্ববর্তী কর্মস্থল সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্স থেকে দুর্নীতির দায়ে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল; * বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকান্ডের ইন্ধন ও অর্থ যোগান দেয়ার অভিযোগে ৩ মামলায় আসামি; * দেশ ত্যাগ রোধে পুলিশের চিঠি।
বিশেষ প্রতিনিধি: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নিয়ম পরিপন্থি কোম্পানির প্রায় ২ কোটি টাকা বাকি ব্যবসা, কোম্পানি পরিচালনার জন্য সর্বপ্রকার আইন অমান্য করে অবৈধ কাজ করার উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেওয়াসহ মোট ৭ টি অভিযোগ উঠেছে পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি ইসলামি ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আব্দুল খালেক মিয়ার বিরুদ্ধে।
এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকান্ডের ইন্ধন ও অর্থ যোগান দেয়ার অভিযোগে ৩ মামলায় আসামি করা হয়েছে তাকে।এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে ইন্ধন ও অর্থ যোগানদাতা হিসেবে দুটি এবং গাজীপুরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের এক মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। এরি মধ্যে তার দেশ ত্যাগ রোধে পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বরাবর কোম্পানিটির পক্ষ থেকে অনিয়মের ৭টি বিষয় উল্লেখ করে অভিযোগ করেছে বলে আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আব্দুল খালেক মিয়া বিভিন্নভাবে কথায় কথায় কর্মীদের ছাঁটাই করার হুমকি দিচ্ছেন যেটা শ্রম-বীমা ও সরকারি আইনরে পরিপন্থি। এতে করে কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত, এতে করে অফিসের দৈনন্দিন কাজে ব্যঘাত ঘটছে।
সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের সাথে তিনি খারাপ আচরণ করছেন এবং কথায় কথায় খারাপ ভাষা প্রয়োগ করছেন, যা তিনি তার ক্ষতার অপব্যবহার করছেন। শ্রম-বীমা ও সরকারি আইন অমান্য করে কর্মঘণ্টা সবার জন্য বৃদ্ধি করে অপচয় বাড়াচ্ছেন।
সরকারি সার্কূলারে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত অফিস সময় নির্ধারণ করার পরেও তিনি সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৬ পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করেছেন যেটা কর্মকর্তা কর্মচারিদের জন্য মানসিক ভাবে অত্যাচারের শামিল। কোম্পানির পরিচালনার জন্য সর্বপ্রকার আইন অমান্য করে অবৈধ কাজ করার উৎসাহ ও উদ্দীপনা তার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়।
এছাড়াও কোম্পানিতে আব্দুল খালেক মিয়া জয়েন করার পূর্বে কোম্পানিতে আইডিআরএ’র নিয়ম অনুযায়ী কমিশন প্রদান করা হত তিনি জয়েন করার পরে তার ইচ্ছা মত কমিশন প্রদান করছেন যা আইডিআরএ’র নিয়ম বহির্ভূত। এর আগের কোম্পানি থেকে দূর্নীতির দায়ে তাকে কোম্পানি থেকে অব্যহতি দেয়া হয়।
তিনি সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ১৬ কোটি টাকা বাকি ব্যবসা করেছেন এবং ইসলামি ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যবসা করেছেন যা আইডিআরএ’র নিয়ম শৃঙ্খলার পরিপন্থি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইসলামি ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। ইসলামি ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে ফোন দিলে তারা জানান স্যার অসুস্থ তাই অফিস করছেন না। তবে এই প্রতিবেদক বিভিন্ন সূত্রে জেনেছেন তিনি অফিসে না আসলেও বাসায় থেকে অফিসের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে গত ১১ অক্টোবর গাজীপুরের গাছা থানায় মামলাটি করেন নিহতের বাবা মামুন সরদার।গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী মোহাম্মদ রাশেদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে দায়ের করা হত্যাকাণ্ডের দুটি অভিযোগের একটিতে ২৭ ও আরেকটিতে ৩৮ নং আসামি হিসেবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়ার আবেদন করা হয়েছে।
গত ১১ অক্টোবর গাজীপুরের গাছা থানায় শহীদ রায়হান আলীর বাবা মামুন সরদারের দায়ের করা মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন ও প্রতিহত করতে হত্যাযজ্ঞ চালাতে অর্থায়ন ও সার্বিক সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে আব্দুল খালেকসহ ওই মামলার ১৬৭ জন আসামির বিরুদ্ধে।
এজাহারে বলা হয়েছে, “আসামি ক্রমিক নং-২২ হতে ৬২ পর্যন্ত সকলে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আমলে আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে সিন্ডিকেট বাণিজ্য, ব্যাংকের তহবিল আত্মসাত ও নানাভাবে অবৈধ উপায়ে বিপুল অর্থ-বিত্ত ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে এবং বিদেশে অর্থ পাচার করে। তারা অবৈধ সরকারের অবৈধ এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য যখন যেভাবে প্রয়োজন সেভাবে অর্থ যোগান দিয়ে সর্বমহলে সরকারের অর্থ যোগানদাতা ও শেখ পরিবারের দুর্নীতির বিপুল পরিমাণের অর্থ পাচারে সহায়তাকারী হিসেবে পরিচিত।
“উল্লেখিত নং-২২ হতে ৬২ পর্যন্ত আসামিগণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য আসামি ক্রমিক নং-১ হতে ২১ এবং ৬৩ হতে ১৬৭ এদেরকে বিভিন্নভাবে নগদ অর্থ প্রদান করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য সার্বিক সহায়তা করে। উক্ত আসামিগণ বিভিন্ন সময়ে গণভবন, সচিবালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য বল প্রয়োগ পূর্বক গণহত্যা করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।”
এদিকে গত ২৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে দায়ের করা হত্যাকাণ্ডের একটি অভিযোগে ৩৮ নং আসামি হিসেবে আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়ার আবেদন করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে ২০ জুলাই যাত্রাবাড়িতে ছাত্রজনতার ওপর সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে শহীদ সোহেলের স্ত্রী আয়শা আকতার কুহেলি বাদী হয়ে এই অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই অভিযোগে ২৭ নং আসামি হিসেবে ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধেও আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়ার আবেদন করা হয়েছে।
গত ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে দায়ের করা হত্যাকাণ্ডের আরেকটি অভিযোগে ২৭ নং আসামি হিসেবে আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন করা হয়েছে। ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়িতে শহীদ মিরাজ হোসেনের বাবা আঃ রব মিয়া এই অভিযোগ দায়ের করেছেন।
গাজীপুরের মামলার প্রেক্ষিতে আব্দুল খালেক মিয়ার দেশ থেকে পলায়নের শঙ্কায় তার বিদেশ গমন রোধ চেয়ে চিঠি দিয়েছে পুলিশ।
মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের স্বার্থে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুরের গাছা থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ লেবু মিয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মোঃ আলমগীর হোসেন পুলিশের বিশেষ শাখার, বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর এই চিঠি দিয়েছেন।
Leave a Reply