নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএসইসির চেয়ারম্যানকে অপসারণ, গেইন-ট্যাক্স প্রত্যাহার ও ফোর্স সেল বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে প্রতিবাদ মহাসমাবেশ করেছে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারী) মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনে বাংলাদেশ ক্যাপিট্যাল মার্কেট ইনভেস্টর এসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) উদ্যোগে এ মহাসমাবেশ করে বিনিয়োগকারীরা।
সমাবেশে সংগঠনটির সিনিয়র মুখপাত্র এস এম ইকবাল হোসেনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর,সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ইসমাঈল হোসেন সম্রাট,রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সম্পাদক দিদারুল আলম ভুঁইয়া, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য এহতেশাম হক, সংগঠনটির প্রধান মূখপাত্র নূরুল ইসলাম মানিক। এছাড়া সমাবেশে সারাদেশ থেকে আগত বিনিয়োগকারীরা অংশ নেন।
সমাবেশে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, আমরা বার বার দেখেছি যে, আওয়ামীলীগের সাথে এই শেয়ার বাজারের সম্পর্ক তালাকের সম্পর্কের মতো। আওয়ামীলীগ ৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসল, আমরা সাতানব্বই আটানব্বই সালে দেখলাম বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর শেয়াবাজার লুট এবং ধ্বস নেমেছে। লক্ষ লক্ষ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা শুধু ক্ষতিগ্রস্থ হন নাই, আমরা পত্র পত্রিকায় দেখেছি ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীরা ফ্যানের সঙ্গে গামছা এবং রশি ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
তিনি বলেন, একইভাবে ২০০৯ সালে দিল্লির সমর্থন নিয়ে ফ্যাসিবাদিরা যখন ক্ষমতায় আসল, তারা এক দুই বছরের ভিতরে বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটে করোনার ভাইরাসের মতো আক্রান্ত করে দিল। যেভাবে বাংলাদেশকে তারা গত ষোল বছরে করোনা ভাইরাসের মতো আক্রান্ত করে লুটেপুটে ছিন্নমূলের মতো করে চলে গেছে ঠিক একইভাবে এই ৩৩ লক্ষ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী পরিবারকে রাস্তায় বসিয়ে দিয়ে বছরে বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার লুটপাট করে ইউরোপ আমেরিকায় হাজার হাজার কোটি টাকা দামের বাড়ি-গাড়ি, সম্পত্তি ও টেনিস কোর্ট তৈরি করেছে।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পরে অন্তর্বর্তিকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল সেই সরকার আমাদের জনগণের সরকার হবে, আমাদের দুঃখ-কষ্ট, দূর্দশা বুঝবে। গত ৫ মাসের যে অভিজ্ঞতা, সরকার জনগণের পালস বুঝতে পারছে না এবং জনগণের দুঃখ দূর্দশা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারছে না। যার একটা উদাহরণ এই ভূক্তোভোগী শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীরা।
তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত দেখি নাই এই ১৫ বছরে যেই প্লেয়াররা শেয়াবাজার থেকে ভূয়া কোম্পানী বানিয়ে, আইপিও করে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেল তাঁদের দুই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এই সরকারের দ্বায়িত্ব হল ওই পরিবারগুলোকে ডেকে তাদেরকে সমবেদনা দেওয়া এবং গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যারা পথে বসে গিয়েছেন তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
সম্মেলনে পুঁজিবাজার পতন রোধে তাৎক্ষণিক করণীয় হিসেবে কয়েকটি দাবি জানানো হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-
১। বিএসইসি’র চেয়ারম্যান ও আইসিবি’র চেয়ারম্যান কে দ্রুত অপসারণ করে নতুন যোগ্যচেয়ারম্যান নিয়োগ করে পুঁজিবাজার কে বাঁচাতে হবে।
০২। বর্তমান মার্কেট পরিস্থিতির কারণে গেইন-ট্যাক্স সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে।
০৩। বর্তমান মার্কেট পরিস্থিতির কারণে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে (তদন্ত ও অসময়ে জেড গ্রুপে প্রেরণ বিষয়ে)।
০৪। পুঁজিবাজারের তালিকাভূক্ত কোম্পানীকে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানোর বিধান সংস্কার করা প্রয়োজন। কারণ কোম্পানীর জেড ক্যাটাগরিতে গেলে সর্বোপরি বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
০৫। কোম্পানীগুলোকে আয়ের নূন্যতম ৫০% লভ্যাংশ প্রদান করতে হবে।
০৬। ব্যাংক, ফাইন্যান্স, ইন্স্যুরেন্স, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও আইসিবিসহ পুঁজিবাজারে তাদের যতটুকু বিনিয়োগ করার কথা তা শতভাগ কার্যকর করতে হবে।
০৭। টাস্ক ফোর্সের সংস্কারগুলো মিডিয়ার মাধ্যমে বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের দ্রুত জানাতে হবে। সংস্কারের নামে কালক্ষেপন করে বিনিয়োগকারীকে ক্ষতিগ্রস্থ বা সর্বশান্ত করা হচ্ছে।
০৮। কোম্পানীগুলোকে নূন্যতম শেয়ার ধারণ ৩০% অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।
০৯। বিএসইসি’র দায়িত্ব অন্তত ১০টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজার বিনিয়োগনিয়ে আসা ।
১০। পুঁজিবাজারের তালিকাভূক্ত কোন কোম্পানী পর পর ২ (দুই) বছর লভ্যাংশ প্রদানে ব্যর্থহলে তাহার বোর্ড পুনর্গঠন করতে হবে।
১১। ফোর্স সেল বন্ধ করতে হবে।
বিনিয়োগকারীদের দাবি, রাশেদ মাকসুদ অযোগ্য। তার শেয়ারবাজার নিয়ে জ্ঞান নাই। তারপক্ষে শেয়ারবাজার পরিচালনা করা সম্ভব না। তাই শেয়ারবাজারের স্বার্থে তার দ্রুত পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।
Leave a Reply